কোন বয়সে কতটুকু ঘুমানো প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন ঘুম মানুষের জন্য কতটা জরুরী। এমন অনেকে আছে যাদের রাতে ঘুম আসে না। অনেক জনিত কারণে তারা দিনের বেলায় তাদের কর্মস্থলে সঠিকভাবে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। তাছাড়া ঘুম না হলে মানুষের শরীরে অনেক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
পোস্টসূচীপত্রঃরাতে ঘুম না হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই আজকে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি রাতে ঘুম না হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার। আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভুমিকা

ঘুম মানুষের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনে একটি অভ্যাস। ভালো ঘুম শরীর ও মনকে সব সময় প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। সব ধরনের কাজে মনোযোগ দিতে সহায়তা করে। নিয়মিত ভালো ঘুম মানুষের শরীরকে আরো বেশি কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে। তাই কেউ যদি প্রতিদিন রাতে নিয়মিত ঘুমায় তাহলে পরের দিন তার দিনটা অবশ্যই অনেক ভালো কাটবে।

ঘুমের উপকারিতা

বর্তমান সময়ের মানুষের ঘুমের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক অংশ কমে গিয়েছে। কারণ মানুষ এখন তাই বেশিরভাগ সময় ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল বেশি।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হোক বা সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে আমরা আমাদের স্মার্ট ফোনকে বর্তমানে এমন ভাবে ব্যবহার করছি যে সেটি আমাদের ভালো ঘুমের দেখাতে যথেষ্ট। তাই আমরা যদি ব্যবহার কমিয়ে দিই এবং সঠিকভাবে প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করি আমাদের শরীর ও মন তাহলে দুটোই ভালো থাকবে।

ভালো ঘুমের উপকারিতা

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ- রাতে ভালো ঘুম পর দিন কোন মানুষকে তার কর্মস্থলে সঠিকভাবে কাজ করার শারীরিক ক্ষমতা জোগাতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় রাতে ঘুমানোর অভাবে দিনের বেলায় কোন কাজ করতে গেলে শরীর খুব দুর্বল মনে হয়। তাই কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভালো ঘুমের বিকল্প নেই।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ- মানুষের যে জ্ঞান, চিন্তাভাবনার ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা তার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সে মস্তিষ্ক যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে মানুষ প্রায় অচল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় পড়ে যায়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো ঘুম না হলে সেটাই শরীরে অ্যালকোহলের আসক্তির মতো প্রভাব ফেলে। তাই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে ভালো ঘুমের কোন বিকল্প নেই। এতে করে স্মৃতিশক্তিও সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেঃ- রাতে ভালো ঘুম না হলে অনেক অসুস্থতার উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে ডায়াবেটিস একটি। রাতে ভালো ঘুম না হলে মানবদেহের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে। এর ফলে মানবদেহে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর অনেক প্রভাতে এবং সুযোগকে দুর্বল করে দেয়। তাছাড়া ঘুম কম হওয়ার ফলে ঠান্ডা জনিত অসুখ কোথায় লেগেই থাকে। তাই পরিমিত ঘুম খুবই প্রয়োজন।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেঃ- আমাদের যে হার্ট রয়েছে সেটা ঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য ভালো ঘুমের কোন বিকল্প নেই।রাতে ভালোভাবে ঘুম না হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে ও হার্টের কার্যকারিতা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই শরীর ভালো রাখতে এবং হার্ট কে ভালো রাখতে পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে।

মানসিক চাপ কমাতেঃ- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম মানুষের যে মানসিক চাপ থাকে সেটা কমাতে খুব দ্রুত সহায়তা করে। একজন ব্যক্তি সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে। এতে তার মধ্যে একটি স্ট্রেস কাজ করে। ভালো ঘুম তার এই স্ট্রেসকে দ্রুত কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেঃ- বর্তমান সময়ে ওজন বৃদ্ধির মানুষের জীবনে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলেছে। তবে আপনারা জানেন কি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম মানুষের শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

 মানুষের শরীরে যে খাদ্য উপাদানগুলো গ্রহণ করা হয় তা সঠিকভাবে বিপাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে মানুষের শরীর থেকে হজম হওয়ার মাধ্যমে মেহেদ বেশি বাড়তে পারে না।এতে করে বোঝা যায়, সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম ও খেলাধুলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে।

আয়ু বাড়াতেঃ- ঘুম মানুষের জন্য এতটাই প্রয়োজনী যে কেউ যদি কে প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমায় তাহলে তার আয়ু যারা ৬-৮ ঘন্টার কম ঘুমায় তাদের চেয়ে অনেকাংশে বেড়ে যায়।

দুপুরে কেন বেশি ঘুম পায়

মানুষের শরীরে যে ইনসুলিন নামক উপাদান রয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় যদি বেশি খাওয়া হয়ে যায় তাহলে মানবদেহে ইনসুলিন এর মাত্রা উঠানামা করে বেশি। যেকোনো ধরনের খাবার খাওয়ার পরেই মানুষের শরীরে প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে।

যত বেশি খাওয়া হবে মানুষের শরীরে তত বেশি প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন উৎপন্ন হবে। ইনসুলিন যদি বেশি উৎপন্ন হয় তাহলে মানবদেহে দুটি বিষয় ঘটে।

প্রথম যে বিষয়টি ঘটে সেটি হচ্ছে, মানুষের শরীরে যে হরমোন রয়েছে তাড়াতাড়ি মস্তিষ্কে দিয়ে বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপন্ন করে। এই মেলাটোনিন হচ্ছে ঘুমের হরমোন। তাই দুপুর বেলা বেশি খেয়ে ফেললে ঘুম পায়।

দ্বিতীয়ত খুব বেশি ভারী খাবার খাওয়ার ফলে তা হজম করতে মানুষের শরীরের প্রায় অর্ধেকের বেশি শক্তি ব্যবহৃত হয়। যা মানুষের শরীরকে কিছুটা দুর্বল করে দেয় এবং সে কারণেই দুপুরে ভারী খাবার খাওয়ার ফলে বেশি ঘুম পায়।

দুপুরে ঘুমানোর উপকারিতা

এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে একটু জেগে জিরিয়ে নিতে কার না ভালো লাগে। কর্মজীবী মানুষেরা তাদের কর্মস্থলে এই দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু বসে এবার শুয়ে যেভাবে হোক ঘুমাতে পছন্দ করেন।

তবে অনেকে মনে করেন দুপুরে ঘুমানো ঠিক নয়।তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক দুপুরে ঘুমানো কি উপকার না অপকার?

সারাদিন একটা মানুষ অনেক কাজ করে এবং দিনশেষে ক্লান্তি দূর করতে তার পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। তবে অনেকে রাতে ঘুমানোর আগে দুপুরে ঘুমাতে পছন্দ করে। অনেকে বলে দুপুরে ঘুমানো ঠিক নয় একটি শরীরকে আর দুর্বল করে দেয়।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমালে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, রাতে ঘুমের চেয়ে দুপুরের ঘুম অনেক বেশি শান্তির হয়। তাই দুপুরে যদি কাজের চাপ না থাকে তাহলে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যেতেই পারে। এতে শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকবে।

দুপুরে ঘুমালে কি ওজন বেড়ে যায়

প্রতিটি মানুষের জন্য ঘুম অনেক বেশি শান্তির। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষকে অনেক বেশি পরিসরে কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে। দুপুরে ঘুমানো নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। তবে দুপুরে খাবার খাওয়ার পর তৎক্ষণাৎ ঘুমিয়ে পড়া ঠিক নয়। দুপুরে খাবার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর একটু চাইলে ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

কেউ যদি দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর তৎক্ষণাৎ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে তার ওজন দ্রুত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু ঘুমের সময় মানব দেহের কোন শক্তি খরচ হয় না সে তো দুপুরে খাবার গ্রহণের ফলে সেই খাবার থেকে গৃহীত ক্যালরি মানুষের শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হতে থাকে এবং এতেই ওজন বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিন কতক্ষণ ঘুমানো উচিত

প্রতিটা বয়সের মানুষের জন্যই পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন, শিশু বয়সে একরকম, কৈশোরে একরকম, তার অন্য এক রকম, যৌবনে একরকম এবং বার্ধক্যে এক রকম। একজন পর্যাপ্ত বয়সের মানুষের দৈনিক ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। তবে চলুন আজকে জেনে নেই কোন বয়সের কতটুকু ঘুমানো উচিত।
  • ০-৩ মাস বয়স শিশুদের দৈনিক ১৪-১৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
  • ৪-১১ মাস বয়সী শিশুদের দৈনিক ১২-১৫ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
  • ১-২ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক ১১-১৪ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
  • ৩-৫ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক ১০-১৩ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
  • ৬-১৩ বছর বয়সে শিশুদের দৈনিক ৯-১১ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
  • ১৪-১৭ বছর বয়সীদের দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
  • ১৮ বছরের পর থেকে যে কেউ ৭-৯ ঘন্টা ঘুমালে তারপর্যাপ্ত ঘুম হিসেবে গণ্য হবে।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোন বয়সে কতটুকু ঘুমানো প্রয়োজন সে  সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url