মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ওজন বেড়ে যায় বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা মিষ্টি কুমড়া সম্পর্কে আলোচনা করব। মিষ্টি কুমড়ার জাত সম্পর্কে এবং মিষ্টি কুমড়া খেলে আমাদের জন্য কতটুকু উপকারী এবং অপকারী সবকিছু নিয়েই আর্টিকেলে আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
পোস্টসূচীপত্রঃফল জাতীয় সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া অন্যতম একটি সবজি। মিষ্টি কুমড়া কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই রান্না করে খাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়ার বীজ অনেক সুস্বাদু এবং মানব দেহের জন্য উপকারী একটি খাবার।
ভূমিকা
মিষ্টি কুমড়া এমন একটি সবজি যা দেখতে এবং খেতে দুটোই অনেক সুন্দর। মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতাও অনেক বেশি। মিষ্টি কুমড়া বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে ভাজি রান্না করে খাওয়া যায়, তাছাড়া মিষ্টি কুমড়া ভর্তা এবং ঝোল ঝোল করে রান্না করেও খাওয়া যায়। আপনি যদি মিষ্টি কুমড়া খেতে অপছন্দ করেন তাহলে আপনি অনেক সুন্দর একটি খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মিষ্টি কুমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম
প্রত্যেকটি রফল এবং সবজির তাদের নিজস্ব বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। সেই নামগুলো কি আমরা সচরাচর ডাকি না তবে সে নামগুলো জেনে রাখা আপনাদের জন্য উপকারী হতে পারে।অনেক রকমের মিষ্টি কুমড়ার জাত রয়েছে তবে সবচেয়ে প্রচলিত জাতের নাম হচ্ছে (Cucurbita moschata)।
মিষ্টি কুমড়া কোন ধরনের খাদ্য
মিষ্টি কুমড়া দিয়ে অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। মিষ্টি কুমড়া কি ধরনের খাদ্য সে কথা বলতে গেলে বলা যেতে পারে প্রাই সব ধরনের খাদ্য উপাদানই মিষ্টি কুমড়ার মধ্যেই বিদ্যমান। মানবদেহে বেশিরভাগ খাদ্য উপাদান জগতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি মেলা ভার।
তবে মিষ্টি ঘুমাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই কমপ্লেক্স রয়েছে। তাছাড়া পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, আয়রন, ফসফরাস, জিংক, ক্যালসিয়াম, ক্যারটিনয়েড এবং অন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ বিদ্যমান রয়েছে।
মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা
- মিষ্টি কুমড়াতে ভিটামিন, ফাইবার ও পটাশিয়াম সময় তো খাদ্য উপাদান বিদ্যমান। যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- মিষ্টি কুমড়াতে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান রয়েছে এটি খুব সহজে হজম সহায়ক একটি সবজি। তাই এটি যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও দূরে থাকা যায়।
- মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে যেকোনো ধরনের বড় বড় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন - ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এই জাতীয় আরো অনেক বড় বড় রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।
- যেহেতু মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে তাই এটি ত্বকের অনেক উপকার করে। নিয়ম মতো মিষ্টি কুমড়া খেলে ত্বক কমল ও মসৃণ হয়।
- মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা এতটাই যে, মিষ্টি কুমড়াতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানবদেহে থাকা কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়মমাফিক মিষ্টি কুমড়ার তরকারি খেলে শরীরের প্রয়োজনের শক্তি এবং পুষ্টি দুটোই যোগাযোগের সাহায্য করে। কারণ মিষ্টি ঘুমাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও আইরন খাদ্য উপাদান রয়েছে।
- মিষ্টি কুমড়া যেহেতু ফাইবার যুক্ত খাবার এবং এটি খেলে ক্যালোরি খুব কম মানবদেহে সরবরাহ করে। তাই এটি ওজন কমাতেও সহায়তা করে।
- যেহেতু মিষ্টি কুমড়াতে পটাশিয়াম রয়েছে তাই এটি মানব দেহের উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে এটি মানুষের শরীরে থাকা দুষিত পদার্থ ভেতর থেকে বাইরে বের করে দেয়। এতে লিভার ও ভালো থাকে। কারণ মিষ্টি কুমড়াতে বেটা ক্যারোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন সি খাদ্য উপাদান গুলো রয়েছে। তাছাড়া ভিটামিন সি এর কারনে ঠান্ডা জনিত অসুখ থেকেও দূরে থাকা যায়।
- নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে রক্ত চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাছাড়া যেহেতু মিষ্টি কুমড়াতে ভিটামিন এ উপস্থিত রয়েছে তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- মিষ্টি কুমড়ার সাথে এর বীজও অনেক বেশি সুস্বাদু এবং উপকারী একটি খাবার। মিষ্টি কুমড়ার বীজ থেকে মানবদেহে মিলবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, আশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাদ্য উপাদান।
- গর্ভবতী মায়েদের খেতে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি অনেক বেশি উপকারী। গর্ভাবস্থায় মায়েদের রক্তস্বল্প দেখা দিতে পারে। তবে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার তরকারি খেলে গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতার অভাব দূর হয়। সুস্বাস্থ্য সন্তান লাভের জন্য গর্ভবতী মায়েরা নির্দ্বিধায় মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।
মিষ্টি কুমড়ার জুসের উপকারিতা
মিষ্টি কুমড়া যেমন তরকারি রান্না করে খাওয়া যায় তেমনি জুস তৈরি করেও এটি পান করা যায়। যেহেতু মিষ্টি কুমড়া অনেকভাবেই মানবদেহের জন্য অনেক উপকারি তাই আপনি চাইলে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে জুস তৈরি করেও খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে জুস তৈরি করা অনেক সহজ।
প্রথমে মিষ্টি কুমড়াকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপর সিটি ব্লেন্ডার দিয়ে সেটা পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপরে এর সাথে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী চিনি মিশিয়ে পান করতে পারেন। তবে চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়া উত্তম। কারণ যিনি ফ্যাট জাতীয় একটি খাবার। তাই চিনি না খেয়ে মধু দিয়ে খাওয়াই শ্রেয়।
মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার অপকারিতা
প্রত্যেকটা বিষয় বস্তুরই ভালো এবং খারাপ উভয় দিক রয়েছে। মিষ্টি কুমড়া যেমন উপকারী এমনি উপকারীও। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মিষ্টি কুমড়ার ক্ষতিকর দিকগুলোঃ
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই যেমন মিষ্টি কুমড়া মানবদেহের ভিতরে কাজ করে তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া খেলে রক্তচাপ অনেক বেশি কমে যেতে পারে।
- মিষ্টি কুমড়া পরিমিত পরিমানে খেলে যেমন ওজন কমাতে সাহায্য করে তেমনি মিষ্টি কুমড়া রোজ ১০০ গ্রাম এর বেশি খেলে ওজন বাড়াতেও সময় প্রয়োজন হয় না। তাই খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনের তুলনায় যেন বেশি মিষ্টি কুমড়ার তরকারি না খাওয়া হয়।
- মিষ্টি কুমড়া প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে এই থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাছাড়া পেট ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
- মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন উপস্থিত থাকায় এটি অধিগ্রহণের ফলে মানুষের শরীরের ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করার সমস্যা দেখা দেয়।
মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ওজন বাড়ে
যেহেতু মিষ্টি কুমড়া অনেক সুস্বাদু একটি খাবার তাই এটিতে প্রায় সকল ধরনের খাদ্য উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। মিষ্টি কুমড়া এমন একটি খাদ্য যা পরিমাণে কম খেলে মানব দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। আবার মিষ্টি কুমড়া প্রয়োজনে তুলনায় বেশি খেলে মানবদেহের ওজন অধিক বাড়িয়ে দেয়। তাই মিষ্টি কুমড়া খেতে হলে অবশ্যই নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
মিষ্টি কুমড়া খেলে কি এলার্জি হয়
যদিও মিষ্টি কুমড়া কিছুটা এলার্জি জাতীয় খাবার। তবে অনেকেই আছেন যাদের খাবারে মূলত এলার্জি সমস্যা হয়। অর্থাৎ মিষ্টি কুমড়া খেলে আপনার অ্যালার্জি সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটা জানার জন্য আপনাকে মিষ্টি কুমড়া খেয়ে দেখতে হবে।
মিষ্টি কুমড়ার তরকারি খাওয়ার পর যদি আপনার শরীরে এলার্জি জাতীয় কোন কিছু দেখা দেয় তবে আপনাকে বুঝতে হবে মিষ্টি কুমড়াতে আপনার এলার্জি রয়েছে আর যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে বুঝতে পারবেন মিষ্টি ঘুমাতে আপনার কোন এলার্জি নেই।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ওজন বেড়ে যায় সে সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url