হাত-পা ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, বর্তমান সময়ে অনেকে মনে করে নিজেকে সুন্দর করার মানে হচ্ছে অনেক বেশি ফর্সা হওয়া। তাই প্রায় অনেকেই ফর্সা হওয়ার জন্য কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক অনেক ধরনের উপাদান ব্যবহার করছে। তবে এই থেকে তাদের ঠিক হচ্ছে নাকি ক্ষতি হচ্ছে সেটা তারা বুঝতে পারছে না।
পোস্টসূচীপত্রঃতাদের মানসিক দিকটা এতটাই প্রভাবিত হয়েছে যে তারা ফর্সা হওয়ার জন্য সব রকমের পন্থা অবলম্বন করে। আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্যই যারা প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা হতে চান। তাহলে চলুন আর্টিকেলটি শুরু করা যাক। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

ভূমিকা

প্রায় সবাই বিভিন্ন কাজের চাপে সময় নিজেদের খেয়াল রাখতে পারে না। যেকোনো ধরনের কাজে তাদেরকে বাড়ি থেকে বাইরে যেতে হয়। তখন রোদে বা ধুলা-বালির কারণে মানুষের হাত পা কালো হয়ে যেতে পারে। তাই আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব কিভাবে নিজের যত্ন নিলে আপনাদের হাত পা গুলো আগে অবস্থায় ফিরে আসবে।

হাত পা ফর্সা করার উপায়

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তাপমাত্রা অনেক বেশি। আপনারা যখন বাইরে বিভিন্ন ধরনের কাজে যান তখন রোদে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আপনাদের হাত পা এমনিতেই কালো হয়ে যায়। তাই হাত-পা কালো হওয়া থেকে দূর করতে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

লেবুর ব্যবহারঃ- লেবুতে প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান বিদ্যমান। যা তাপের কালচে ভাবকে দূর করতে সাহায্য করে। প্রথমে দুই একটি লেবু চিপে ভালো করে রস বের করে নিন। তারপর হাত এবং পায়ে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।

এরপর সাধারণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এতে আপনার হাত পায়ের কালচে ভাব অনেকটাই কমে যাবে। কারণ লেবুতে খুব তাড়াতাড়ি রং উজ্জ্বল করার ক্ষমতা রয়েছে।

টক দই এর ব্যবহারঃ- টক দই প্রচুর পরিমাণে ল্যাক্টিক অ্যাসিড রয়েছে। এটিতেও লেবুর মত ব্লিচিং উপাদান বিদ্যমান। এটিও লেবুর মত ত্বকের কাজে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। টক দই এমন একটি উপাদান যা সরাসরি হাত এবং পায়ে লাগিয়ে রাখলে কোন সমস্যা হয় না। যখন এটি শুকিয়ে যাবে এখন সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

শসার ব্যবহারঃ- শসা খাওয়া যেমন শরীরের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি ত্বকের জন্য এটি অনেক উপকারী। শসাতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট। যা প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা ত্বকের মেলানিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

একটি শসা কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে এর রস ১৫ মিনিট ধরে হাত পায়ের ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। রস শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে হাত পা ধুয়ে ফেলতে হবে। কিছুদিনের মধ্যেই আপনি এর ফল দেখতে পাবেন।

কমলার ব্যবহারঃ- কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এটিতেও লেবুর মত ব্লিচিং উপাদান রয়েছে। কমলা যেত লেবু জাতীয় ফল সেহেতু এটিও যদি কেবল মাথায় হাত ও পায়ের ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে অতি দ্রুত কাল যে ভাব দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কমলায় বিদ্যমান ভিটামিন সি তখন উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করে।

পেঁপের ব্যবহারঃ- প্যাপেইনের মতো এনজাইম পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। পেঁপেতে যে উপাদান রয়েছে তা ত্বকের মৃত কোষগুলোকে অপসারণ করতে সহায়তা করে। কমলার মত এতেও ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে।

তরমুজ এর ব্যবহারঃ- ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানি সরবরাহ থাকা উচিত। যা তরমুজে অনেক রয়েছে। তরমুজ এমন একটি ফল যা আপনাদের ত্বককে হাইড্রেটেড এবং পুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া তরমুজে লাইকোপিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ত্বককে সূর্যের শক্তিশালী রশ্মি থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

আনারসের ব্যবহারঃ- আনারসে ব্রোমিলিন নামক একটি এনজাইম রয়েছে। এই এনজাইমটির তাপ শোষণ করার ক্ষমতা অনেক। ত্বকের সঠিক গঠন এবং ত্বকের ভাঁজ পড়া রোধ করতে আনারস খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আনারসে ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ খাদ্য উপাদান রয়েছে।

দুধের ব্যবহারঃ- শারীরিকভাবে দুধ আমাদের জন্য যেমন উপকারী তেমনি ত্বকের জন্যও দুধের গুরুত্ব অনেক। আমাদের সাথে যে কোন কালো বা পোড়া দাগ দূর করতে দুধ খুব দ্রুত কাজ করে। তাছাড়া দুধ ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে সাহায্য করে।

কালো হাত-পা ফর্সা করার উপায়

কোন কারনে হাত পা কালো হয়ে গেলে তা নিয়ে আপনার চিন্তার কোন শেষ নেই। কিন্তু আপনি ঠিক বুঝতে পারেন না কেন কিভাবে আপনার এই অবস্থা হয়েছে। সেটা নিয়ে চিন্তা না করে এখন আপনার চিন্তা করা উচিত কিভাবে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাকঃ

শসা মধুর মিশ্রণঃ- শসা মধু ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। শসা কুচি কুচি করে কেটে এর থেকে রস নিয়ে মধুর সাথে মিশিয়ে হাত ও পায়ের ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে যাওয়ার পর সাধারণ পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ফল পাবেন।

অলিভ অয়েলের ব্যবহারঃ- ভালো অলিভ অয়েল নিয়মিত শরীরের ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা ও তুলতুলের নরম হয়। আপনি যদি আরো ভালো ফল পেতে চান তাহলে অলিভ ওয়েল এর সাথে কিছুটা কেশর মিশে নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।

নারকেলের পানির ব্যবহারঃ- ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ বা পোড়া জাতীয় দাগ দ্রুত সারিয়ে ফেলতে নারকেলের পানি খুব দ্রুত কাজ করে। তাছাড়া হাত-পা ফর্সা করতেও নাকেলের পানি খুব উপকারী। সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

ডিমের ব্যবহারঃ- সপ্তাহে দুইবার ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে হাত-পায়ের কালচে ভাব অতি দ্রুত সেরে যায়।

ওটমিলের ব্যবহারঃ- হাত ও পা ফর্সা করতে ওটমিলের সঙ্গে টমেটো ও দই দিয়ে এটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এটি শরীরে ভালো করে লাগিয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি আপনার শরীরের সুকনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুব দ্রুত হাত ও পা ফর্সা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাজুবাদামের ব্যবহারঃ- প্রতিদিন রাতে বেশ কিছু কাজুবাদাম ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাদামগুলো ভালো হয়ে বেটে নিয়ে হাত ও পায়ে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। পরে এটি শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এটিও একটি ভাল ঘরোয়া উপায়।

চন্দনের ব্যবহারঃ- আপনারা অনেকেই মুলতানি মাটির নাম শুনে থাকবেন। মুলতানি মাটি দিয়ে চন্দনের গুঁড়া ভালো হয়ে পেস্ট তৈরি করে হাত ও পায়ে লাগাতে হবে। এটিওতো উজ্জ্বলতাতে অনেক ভূমিকা পালন করে।

জিরার ব্যবহারঃ- বেশ কিছু গোটা জিরা নিয়ে পানিতে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। এরপর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে নিয়মিত হাত ও পা ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে। এটি তো খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

আলুর রসের ব্যবহারঃ- আলুর রসও হাত ও পায়ে ব্যবহারের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। আলুর রস আপনার ত্বকের চামড়া ব্লিচ করে এবং স্বাভাবিকভাবে ফর্সা হতে সাহায্য করে।

মসুর ডালের ব্যবহারঃ- মসুর ডালের সঙ্গে দুধ অথবা দই মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি হাত ও পায়ে ভালো হয়ে লাগিয়ে শুকানোর জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর সরণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

হাত ও পা ফর্সা করতে বিভিন্ন স্ক্রাব

অনেকে রয়েছে যাদের মুখের যে হাত ও পা অনেক কাল যে ভাব ধরে থাকে। এটি আসলে রোদে বা অতিরিক্ত গরমের তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। তো এখন আপনাদের বিভিন্ন স্ক্রাব সম্পর্কে জানাবো যা ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জলতা ও ফর্সা ভাব ফিরিয়ে আনা যায়ঃ-

মধু ও অ্যালোভেরার স্ক্রাবঃ- মধু ও অ্যালোভেরার গুণাগুণ সম্পর্কে জানেনা এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। অ্যালোভেরাতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ডেড সেল গুলোকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই অ্যালোভেরার সাথে মধু মিশিয়ে তা তোকে ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা হওয়ার সাথে সাথে আরো অনেক উপকার পাওয়া যায়।

লেবু, শসা ও হলুদের স্ক্রাবঃ- প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে ফর্সা ও লাস্যময়ী করতে এই তিনটি উপাদানের গুরুত্ব অনেক। একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ৩-৪ টেবিল চামচ শসার রস ও হাফ চা চামচ হলুদের গুঁড়া নিয়ে ভালোভাবে পেজ তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে হবে। এই পেস্টটি ব্যবহার পাওয়ার অবশ্যই কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।

চিনি এবং কফি দিয়ে স্ক্রাবঃ- কফি মূলত খেতেই অনেকে বেশি পছন্দ করেন। তবে আপনি চাইলে কফি দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে তোকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে পারেন।এর জন্য আপনাকে প্রথমে ১ কাপ কফি পাউডারের সাথে ২ টেবিল চামচ চিনি ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। আপনারা চাইলে এতে কোকোনাট অয়েল বা যেকোন এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণটি দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ভালো হয় স্ক্রাব করে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে দেখে ফেলতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হাত-পা ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url