গ্যাস্ট্রিক এর কারনে কি কি সমস্যা হয় বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন বর্তমান সময়ের মানবদেহে শারীরিক সমস্যার মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছেন। মানুষের শরীরে আর কোন ওষুধ থাকুক বা না থাকুক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রায় সময় লেগেই থাকে।
পোস্টসূচীপত্রঃমানবদেহের এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়েই আজকে আমরা এই আর বিকেলে আলোচনা করব। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কেন হয়, এর প্রতিকার কি সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব। তাই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রায় প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকে। তবে সে ওষুধগুলো আদো তার শরীরের জন্য উপযুক্ত কিনা তা বোঝা মুশকিল।
গ্যাস্ট্রিক কাকে বলে
গ্যাস্ট্রিক এমন একটি ব্যাধি যা পেটের অভ্যন্তরে হয়ে থাকে।গ্যাস্ট্রিককে স্টোমাক ইনফ্লামেশন বা গ্যাস্ট্রিক ইনফ্লামেশন নামেও আখ্যায়িত করা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, পেটের ভেতরে আস্তরণের প্রদাহ, ব্যথা বা ক্ষয়কে গ্যাস্ট্রিক বলা হয়।
কি কি কারনে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে
অনেকে গ্যাস্ট্রিককে অম্বল নামেও চিনে থাকেন। অনেক সময় মানুষের নিজস্ব ভুলের কারণেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মানবদেহে বাসা বাঁধে। তবে মূলত, মানুষের অনিয়মিত, অপরিমিত ও অপুষ্টিকর খাদ্যাভাসের জন্য গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অপুষ্টিকর খাদ্যাভাস বলতে যেসব খাবার অতিরিক্ত মসলা দিয়ে রান্না করা হয় সেগুলোকে বোঝায়।
তবে পাম অয়েল, ভেজাল মসলা, অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া, অধিক পরিমাণে ভাজা জাতীয় খাদ্য খাওয়া এবং অধিক পরিমাণে চা কফি পান করলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলতে হঠাৎ করে খাওয়ার আগে বা পরে অনেক বেশি বুক জ্বালাপোড়া করা এবং পেট ব্যথা করার মত কিছু উপসর্গ কে বুঝায়।
তাছাড়া পেট খালি থাকলেও অর্থাৎ তিন বেলা ঠিকমতো নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া না করলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণেও অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
কিভাবে বুঝবেন আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়েছে
গ্যাস্ট্রিক এখন এমন একটি পরিচিত শব্দ যা প্রতিটি মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে গেছে যেন প্রতিটি মানুষ তাই সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাতেই ভোগে। আপনার গ্যাস্ট্রিক হলে কিভাবে বুঝবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- হঠাৎ হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়া
- ঘন ঘন পেট খারাপের সমস্যা দেখা দেয়া
- পেটে ও পিঠে হঠাৎ করে ব্যথা অনুভূত হওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া
- খাবার খাওয়ার সময় খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া
- মুখের মধ্যে টক অনুভূত হওয়া
- খাদ্যনালীতে খাদ্য আটকে আছে এমন অনুভূত হওয়া
- পেটের মধ্যে ঘন ঘন প্রদাহ হওয়া
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে করণীয়
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যেকোনো বেলারই হোক না কেনো খাবার খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়া যাবে না।
- যে সমস্ত শাকসবজি বা খাদ্য দ্রব্য সহজে হজম হয় না সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে যেকোনো ধরনের ডাল জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
- বাজারের বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
- প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে মাংস জাতীয় খাদ্য খাওয়া।
- অধিক পরিমাণে পানি পান করা।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকাই ভালো।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়
যেহেতু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মানুষের নিত্য সঙ্গী হয়ে গিয়েছে তাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অনেক নিয়ম কানুন আছে যেগুলো মেনে চলতে হবে এবং খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। তবে কোন ব্যক্তি যদি বারবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন তবে তিনি চাইলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।
তবে ঘরোয়া কিছু উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা সম্ভব। নিম্নে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু ঘরোয়া নিয়ম কানুন উল্লেখ করা হলো
ভেষজ জাতীয় চা খাওয়াঃ- ভেষজ চা মানুষের শরীরকে অনেক ভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ভেষজ চা খেলে অতি দ্রুত বুক জ্বালা পোড়া করা এবং গ্যাসের সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যায়।
পুদিনা পাতার জুস তৈরি করে খাওয়াঃ- পুদিনা পাতার রস খেলে গ্যাসের সমস্যা খুব দ্রুত সেরে যায়। তবে পুদিনা পাতার রস খেলে পেটের যেকোনো ব্যাথা অনেক দ্রুত সেরে যায়।
ঠান্ডা দুধ পান করাঃ- এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ ও চিনি ছাড়া দুধ মানবদেহ থেকে গ্যাসের সমস্যা নিমিষেই দূর করে দেয়। দুধে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম আছে। যা শরীরে উতপাদিত ক্ষতিকর অ্যাসিডিকে বাধা দিতে সাহায্য করে।
লেবু পানি বা লেবুর শরবত খাওয়াঃ- প্রতিদিন লেবু পানি খেলে বা চায়ের সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে অর্থাৎ লেবু চা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়।
লবঙ্গ ও এলাচ খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়াঃ- প্রতিদিন ২-৩ টা লবঙ্গ ও এলাচ খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। এটিও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে অনেকটাই উপশম দেয়।
নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়াঃ- নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বদহজম থেকে শরীরকে অনেক দূরে রাখে।
চিয়া সীড এর বীজ খাওয়াঃ- চিয়া সীড বীজ খুব উপকারী একটি খাদ্য। এটি ঠান্ডা পানির সাথে ভিজিয়ে রেখে ৩০ মিনিট পর খেলে শরীররে সুস্থ রাখে এবং খাবার হজমেও খুব ভালো কাজ করে।
নিয়মিত শসা খাওয়াঃ- পেট ঠান্ডা রাখতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত শসা খার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এটি সঠিক ভাবে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে অনেক কাজ করে।
দই জাতীয় খাদ্য খাওয়াঃ- দই এমন একটি উপাদান যেটাতে অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই সকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই খাবার পর দই খাওয়া খুব কার্যকর।
পাকা পেঁপে খাওয়াঃ- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পেঁপের গুরুত্ব অনেক। কারণ পেতে পাপায়া নামে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কলা ও কমলা খাওয়াঃ- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে হজম শক্তি বাড়াতে কলাম কমলার গুরুত্ব অনেক। কারণ এতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। এটিও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আদা রস করে এ রসটা খাওয়াঃ- আদা রস করে খেলে আদতে যে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে তা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হলে বুকের জ্বালাপোড়া রোধ করতে সহায়তা করে। আদা খেলে বমি সমস্যা এবং বদহজমের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
রসুনের কোয়া খালি পেটে খাওয়াঃ- মানব দেহের যে কোন এসিডিটির সমস্যা দূরীকরণে রসুনের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে।
নিয়মিত ডাবের পানি পান করাঃ- ডাবের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপাদাম বিদ্যমান। যা মানব দেহের হজম শক্তি বাড়াতে অনেকটা সহায়তা করে।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক এর কারনে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url