ফিটকিরি কি খাওয়া যায় - ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে ফিটকিরি খুব উপকারী একটি উপাদান। তবে অনেকে হয়তো জানেন না এটি আমাদের কতটুকু উপকারে আসে। অনেকে জানেন না ফিটকিরি আসলে কি? এটি দেখতে কেমন?
পোস্টসূচীপত্রঃআজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো ফিটকিরির ব্যবহার সম্পর্কে। তাই আমাদের এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইলো।

ফিটকিরি কি

ফিটকিরি হলো একটি যৌগ লবণ যা সোডিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা গঠিত। ফিটকিরি দেখতে কেমন সেটা প্রায় সবাই জানে। ফিটকিরি দেখতে অর্ধস্বচ্ছ কাচের মতো। ফিটকিরি এমন একটি উপাদান যা পানি শোধণের জন্য খুব উপকারি। ফিটকিরি অতি সহজলভ্য ও উপকারী একটি উপাদান। ফিটকিরির রাসায়নিক নাম পটাশ এলাম। এটি ইংরেজীতে এলাম নামে পরিচিত।

ফিটকিরির কাজ কি

ফিটকিরি মূলত পানি পরিশোধীত করতে ব্যবহার করা হয়। তবে এর আরো অনেক কাজ রয়েছে। ছোট এই জিনিসটা মানবদেহের ত্বকের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। ফিটকিরির আরো যেসব কাজ রয়েছে তা নিচ উল্লেখ করা হলোঃ

মুখের যে কোন ঘা নিরাময়েঃ- আপনার মুখের ভেতরে যদি কোন ধরনের ঘা হয়ে থাকে তাহলে ফিটকিরি ব্যবহার করে আপনি সেই ঘা অতি দ্রুত নিরাময় করতে পারেন। মুখের যেখানে ঘা হবে সেখানে ফিটকিরি আলতোভাবে লাগাতে হবে। তবে এই সময় মুখে লালা গিলে না ফেলে বাইরে ফেলে দিন।

মুখের ব্রণ প্রতিরোধেঃ- ফিটকিরি ত্বকের জন্য অনেক উপকারি একটি উপাদান। মুখের ব্রণ প্রতিরোধে ফিটকিরি খুব দ্রুত কাজ করে। আপনারা সবাই মুলতানি মাটিতে চেনেন। এই ১ চামচ মুলতানি মাটি, ২ চামচ ডিমের সাদা অংশ সাদা এবং ১ চামচ ফিটকিরি গুড়া দিয়ে ভালোভাবে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর সেটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর স্বাভাবিক পানিতে দিয়ে ফেলুন।

উকুন থেকে মুক্তি পেতেঃ- অনেকেরই উকুনের সমস্যা হয়ে থাকে। উকুনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে প্রথমে একটা বালতিতে ফিটকিরি গুড়া করে মিশিয়ে এতে চা গাছের তেল মেশাতে হবে। এরপর সেই পানি দিয়ে মাথার ত্বকে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে উকুনের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হয়।

মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণেঃ- মুখে দুর্গন্ধ পরিচিত একটি সমস্যা। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। খাবার খাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ না ধরলে অর্থাৎ কুলকুচি না করলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিদিন সকালে এবং খাওয়ার আগে গরম পানিতে এক চিমটি লবণ ও ফিটকিরি গুড়া মেশান। এরপর পানির ঠান্ডা হলে ভালোভাবে কুলকুচি করুন। এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

বয়সের ছাপ দূর করতেঃ- আপনারা প্রতিনিয়ত কোন না কোন কাজ অবশ্যই করেন। প্রতিনিয়ত কোন কাজ করতে করতে ক্লান্তিতে এবং অবসাদের জন্য বা অজিত পরিশ্রমের ফলে মুখে বসে ছাপ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে ফিটকিরি হতে পারে আপনার জন্য খুবই উপকারী একটু উপাদান। বাড়ির বাইরে থেকে এসে এক টুকরো ফিটকিরি পানি দিয়ে ধুয়ে তারপর ভালোভাবে মুখে ঘুষতে হবে। এরপর আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

পা ফাটা দূর করতেঃ- ফিটকিরি হতে পারে পা ফাটা থেকে আরোগ্য পাওয়ার একটি সহজ উপায়। ফিটকিরি পানিতে ভিজিয়ে পায়ের গোড়ালিতে ব্যবহার করলে পায়ের মরা চামড়া উঠে তাকে নরম ও মসৃণ করে। তবে পায়ের ফাটাই লাগানোর জন্য আরেকটি প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।

একটি বাটিতে ১ চামচ নারিকেল তেল, ২ চামচ ফিটকিরি গুড়া ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এরপর ভালো করে পা ধুয়ে শুকিয়ে প্যাকটি ব্যবহার করুন। এরপর ব্যক্তি দিয়ে পাঁচ মিনিট মাসাজ করতে হবে। এর ১০-১৫ এক মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলতে হবে।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেঃ- চোখের নিজের কালো দাগ দূর করতে খুব সাহায্য করে। ১ চামচ ফিটকিরি ও ১ চামচ মধু দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর সেটি ৪-৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। ৪-৫ মিনিট পর একটি ধুয়ে ফেলুন। তবে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে মুখে পানি দেওয়ার সময় জাতে চোখে পানি না যায়।

ফিটকিরি খেলে কি হয়

যদিও ফিটকিরি পানি বিশুদ্ধ করণে ব্যবহারের কাজে লাগানো হয় তবে এই পানি খেলে বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস হয়। তবে ভাইরাস জনিত কোন কিছু ধ্বংস হয় না। তবে ফিটকিরি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাশয়, টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও কৃমি জাতীয় বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তবে জন্ডিস এর ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরো উল্টো। কারণ ফিটকিরি জন্ডিসের ব্যক্তিগত ধ্বংস করতে অক্ষম। এ থেকে বোঝা যায়, ফিটকিরি শত ভাগ পানি বিশুদ্ধ করতে পারে না।

ফিটকিরি ব্যবহারে উপকারিতা

পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ফিটকিরি আরো কিছু কাজ করে থাকে যা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • অনেকদিন যাবত ফ্রিজ পরিষ্কার করা না হলে এতে দুর্গন্ধ জমে যায়। হলে ফ্রি খাবার রাখার উপযুক্ত থাকে না। এমতাবস্থায় সব ধরনের খাবারের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এই সমস্যা দূরীকরণে একটি বাটিতে ফিটকিরি গুড়া করে রেখে দিলে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।
  • ফিটকিরি এমন একটি উপাদান যা ঘামের গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। এজন্য যদি আপনার শরীর থেকে কোন রকমের বাজি গন্ধ আসে সে ক্ষেত্রে আপনি ফিটকিরি মেশানো পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে আপনার শরীরের দুর্গন্ধ চলে যাবে।
  • রান্না ঘরের মেঝে পরিষ্কার করতেও ফিটকিরি অনেক উপকারী। একটি বালতিতে বড় এক টুকরো ফিটকিরি ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে রান্নাঘরের মেঝে পরিষ্কার করলে মেঝে ঝকঝকে ও জীবন মুক্ত হয়ে যায়।
  • ফিটকিরির সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয় এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
  • দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার থেকে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাকটেরিয়া দূর করতে ফিটকিরি অনেক উপকারী।

ফিটকিরি ব্যবহারে অপকারিতা

এমন কোন অপকারিতা নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেকোনো রোগের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস না হতেই পারে। এটি হচ্ছে ফিটকিরি সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক। তাই যে কোন রোগ হলে শুধু ফিটকিরির উপর আশা করে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ফিটকিরি চুলের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর

চুলের জন্য ফিটকিরি অনেক উপকারি একটি উপাদান। যেহেতু ফিটকিরি ত্বকের যে কোন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে সেক্ষেত্রে চুলের নিচের যে ত্বক রয়েছে নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া ফিটকির মেশানো পানি দিয়ে চুল ধুলে উকুনের সমস্যা থেকেও সমাধান পাওয়া যায়।

চুলে ফিটকিরি ব্যবহারে এর পুষ্টিগুণ ও বৃদ্ধি বাড়ে। তাছাড়া চুলের ভেতরের তুমি থাকো ময়লা গুলোকে অপসারণ করতে সাহায্য করে। তাই চুলে ফিটকিরি ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ফিটকিরি সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url