শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনি ভালো আছেন। আজকে আপনারা জানতে চলেছেন শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ কিভাবে করা যায়। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
শিশুদের ভালো অভ্যাস গড়ে তোলাঃ- বর্তমান সময়ের শিশুদের সবচেয়ে খারাপ অভ্যাস হচ্ছে রাত জেগে টিভি দেখা, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, সঠিক সময়ে না ঘুমাতে যাওয়া ইত্যাদি। এ সমস্ত বিষয়ে বাবা-মায়ের সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখা উচিত।
শিশুকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করুনঃ- বর্তমান সময়ে অনেক শিশু কোন কাজ করতে যেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। এতে তাদের মানসিক চাপটা ও বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিটি বাবা মায়ের উচিত চাপ মুক্ত থাকার উপায় শিখিয়ে দেয়া।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
পোস্টসূচীপত্রঃশিশুদেরকে ঠিক ভাবে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে হলে তাদের সঠিকভাবে বিকাশ হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টা ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সেই জন্য বাবা মাদের সচেতনতার সাথে শিশুদের বড় করে তুলতে হবে।
ভুমিকা
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাবা মার অবদান অনেক বেশি। কারণ বাবা মা তাদের সন্তানদের বড় করার জন্য তাদের নিজেদের সকল সুখকে বিসর্জন করে তাদের মানুষ করার জন্য প্রতিনিয়ত কষ্ট করে যাচ্ছে। তবে সন্তান আসলেই মানুষ হচ্ছে নাকি বিপথে চলে যাচ্ছে সেটাও বাবা মায়েদের লক্ষ্য রাখা উচিৎ।
শিশুর শারীরিক বিকাশ
একটা শিশুর জন্ম হওয়ার পর থেকে তার বেড়ে ওঠার পর্যন্ত তার শারীরিক যে পরিবর্তনগুলো হয় সেটাকেই মূলত শারীরিক বিকাশ বলা হয়। শিশুর শারীরিক বিকাশ বলতে তার বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা সেটাও একটা মূল কারণ। কোন কোন শিশুর বিকাশ ঠিক ভাবে হয়। আবার কোন কোন শিশুর বিকাশ ঠিক ভাবে হয় না।
খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে শিশুদের শারিরীক বিকাশে ব্যাঘাত
সঠিক খাদ্য ও পুষ্টিজনিত কারণে বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার রাস্তা-ঘাটের পাশের দোকানগুলো থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েও অনেক শিশু প্রায় সময় অসুস্থ অবস্থায় থাকে। সঠিকভাবে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য না পেলে প্রত্যেকটি শিশুর শারীরিক বিকাশে খুব মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
অপুষ্টির কারণে শিশুদের বিকাশে ক্ষতি
বর্তমান সময়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,শিশুদের অপুষ্টির কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্রতা, পুষ্টি সম্পর্ক অভিজ্ঞতা না থাকা এবং বাবা মার অসচেতনতা। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে শিশুদের শারীরিক গঠনের যে মূল প্রভাব পড়ে সেটা হচ্ছে শিশুদের আকৃতি ছোট হওয়া এবং শিশুদের শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হওয়া।
পুষ্টির অভাবের শিশুদের শারিরীক রোগ প্রতিরোধ যে ক্ষমতা রয়েছে সেটা হ্রাস পায়। তাছাড়া শিশুদের রক্তস্বল্পতা সহ আরো নানা ধরনের রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে।
অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর ফলে শিশুদের বিকাশে ক্ষতি
দরিদ্র পরিবারে বাবা মা যদিও শিশুদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য হয়তো খাওয়াতে পারে না কিন্তু বর্তমান সময়ে স্বচ্ছল পরিবারের শিশুদের ও পুষ্টিহীনতা দেখা দিচ্ছে। কারণ, সচ্ছল পরিবারের বাবা-মা তাদের শিশুদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য না খাইয়ে তাদের ইচ্ছামত পানীয়, চিপস ও নানা ধরনের জাঙ্ক ফুড খাইয়ে তাদের পুষ্টিহীনতার কারণ হচ্ছে।
শিশুদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানোর মানে এই নয় যে ভালো ভালো খাবার বেশি বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানোর মানে হচ্ছে যে খাবারগুলো শিশুদের জন্য ঘর সেগুলোকে পরিমিত পরিমাণে সঠিক নিয়মে খাওয়াতে হবে।
শিশুদের শারীরিক বিকাশে করণীয়
শিশুদের শারীরিক বিকাশের জন্য অবশ্যই তাদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানোর কোন দিকে কোন। শিশু জন্মের পর থেকে নিয়ম মাসিক টিকা প্রদান করতে হবে। তাছাড়া শিশুর ছোটখাটো সমস্যার কারণে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
শিশুদের শারীরিকভাবে বিকাশের আরেকটি উপায় হচ্ছে তাদেরকে ঠিকভাবে খেলাধুলা করার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। কারণ শিশুদের শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে খেলাধুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিশুর মানসিক বিকাশে করণীয়
শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলাঃ- শিশুদেরকে কখনো মিথ্যা কথা বলা ঠিক নয়। যখন কোন শিশু কোন কাজ তার নিজের আত্মবিশ্বাস দিয়ে করবে তখন বাবা মায়ের উচিত সন্তানকে উৎসাহ দিয়ে সেই কাজটি করতে বলা। শিশু যখন কোন কাজ করবে তখন তার কাজ শেষ হওয়ার পর তা কি ঠিক হয়েছে না ভুল হয়েছে সে বিষয়ে তাকে প্রশংসা করতে হবে।
যদি সেই কাজটি ঠিক হয় তাহলে তাকে সেই কাজে উৎসাহ দিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আর সেই কাজটি যদি ভুল হয়, তাহলে তাকে ভুল ধরিয়ে দিয়ে কাজটি সঠিকভাবে করার উৎসাহ দিতে হবে।
শিশুর প্রতি মনোযোগী হওয়াঃ- প্রতিটি বাবা মায়ের প্রতি তার সন্তান তাকে কখন কি বলছে সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনাও। তাদের কথাকে গুরুত্ব দেয়া। তাদের সন্তান যখন ভালো কিছু চাইবে তখন সেটা এনে দেওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় হলে সরাসরি 'না' না বলে কৌশলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া। সরাসরি 'না' বোধক কোন উত্তর পেলে শিশুদের মনঃক্ষুন্ন হয়।
এতে তাদের মধ্যে একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। বাবা মায়ের উচিত মনোযোগ ও আগ্রহের সাথে সন্তান দিয়ে প্রত্যেকটা কথা শোনা। এতে তারাও শিখতে পারবে কেউ কিছু বললে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং সেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে। তাছাড়া তারা যদি মনোযোগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে তবে তারা লেখাপড়া সহ যেকোন কাজেই মনোযোগ দিয়ে আগ্রহ সহকারে কাজ করতে পারবে।
তাদের সামনে টিভি বা মোবাইল না দিয়ে তাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যস গড়ে তুলুন। তাদেরকে মোবাইলে আজেবাজে ভিডিও না দেখিয়ে শিক্ষনীয় ভিডিও দেখান। এতে তাদের মধ্যে অবশ্যই ভালো অভ্যাস গড়ে উঠবে।
শিশুদের কাছে বিশ্বাসী হয়ে উঠুনঃ- কোনদিন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গেলেন না, কিছু কিনে দিবেন বলে দিলেন না। এ সমস্ত বিষয়গুলো শিশুদের সাথে করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। বিভিন্ন ব্যস্ত এবং কাজের জন্য আপনি আপনার সন্তানকে কথা দেওয়ার পরেও সেটা রাখতে পারলেন না।
এমনটা হতে পারে তবে, আপনাকে মনে রাখতে হবে এটা করা একদম ঠিক নয়। এতে তার ভিতরে আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার মানসিকতা তৈরি হয়। সেও মনে মনে এরকম কথা না রাখার মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। তাই বাবা মায়ের উচিত এরকম অভ্যাস করে পরিত্যাগ করা।
শিশুদের আবেগ প্রকাশ করতে দেয়াঃ- আপনার সন্তান যদি আপনার সামনে আবেগ প্রকাশ করতে চাই তাহলে আপনার উচিত তাকে সেই স্বাধীনতা দেয়া। আপনার সন্তান যদি আপনার সামনে কোন কারনে মন খুলে হাসতে চাই তাকে হাসতে দিন। সে যদি কোন বিষয়ে মন খারাপ করে কান্না করতে চায় তাহলে তাকে কান্নাও করতে দিন।
তার মন খারাপের কারণ জানতে চেয়ে তাকে ঠিক করার চেষ্টা করুন। কখনো তার আবেগকে প্রকাশ করতে বাধা প্রদান করবেন না।এতে তার ছোট মনটাকে শুরু থেকে শেষ করে দিবে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিপ্রেশনে রূপ নিবে। তাই বাবা মায়ের উচিত সন্তানের আবেগের গুরুত্ব দেয়া।
শিশুকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করুনঃ- বর্তমান সময়ে অনেক শিশু কোন কাজ করতে যেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। এতে তাদের মানসিক চাপটা ও বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিটি বাবা মায়ের উচিত চাপ মুক্ত থাকার উপায় শিখিয়ে দেয়া।
কারণ অনেক শিশু চাপে পড়ে মানসিক অসুস্থতায় ভোগে এবং একটা সময় আত্মহত্যা করার ইচ্ছা মনের মধ্যে জেগে ওঠে। তাই তাদেরকে অন্য ভাল কোন কাজে মনোযোগী করে তাদেরকে চাপ মুক্ত রাখা উচিত।
ব্যায়াম ও খেলাধুলাঃ- ব্যায়াম ও খেলাধুলা শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। চায় তাদেরকে নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলার মাঝে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। যদি পারেন আপনারাও তাদের সাথে খেলাধুলা করুন। এতে আপনার সাথে আপনার সন্তানদের ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url