কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ - মেয়েদের কোমর ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক, মানব দেহের শারীরিক সমস্যার মধ্যে কোমর ব্যথার সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় সব মানুষেরই কোমর ব্যথার লক্ষণ দেখা গেছে। তবে কেন এবং কি কারনে হঠাৎ কোমর ব্যথা হয় তাকেও জানেনা।
পোস্টসূচীপত্রঃহঠাৎ হঠাৎ কোমর ব্যথা আপনাদের দৈনন্দিন কাজকে ভালোভাবে সম্পূর্ণ করতে দেয় না। তাই আজকে আপনাদেরকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে কোমর ব্যথার কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব।
ভূমিকা
কোমরের সাথে মেরুদন্ডের হাড় সরাসরি ভাবে যুক্ত। তাই কোমরে ব্যাথা হওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে মেরুদন্ডের হাড়ে ব্যথা হওয়া। মানবদেহের পুরো গাঠনিক শক্তি মেরুদন্ডের হাড়ের উপর নির্ভরশীল। তাই এটিকে সুস্থ রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।
কোমর ব্যথার কারণ
কোমর ব্যথা খুব পরিচিত একটি সমস্যা। অনেক সময় এসে কথার পেছনে কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকে না। এরকম সমস্যা হলে একা একাই ব্যাথা সেরে যায়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণবশত কোমর ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কোমর ব্যথা হওয়ার কারণ গুলি উল্লেখ করোঃ-
- নিজস্ব কর্মস্থলে ঠিকভাবে বসে কাজ না করলে কোমর ব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়। কারণ এর আগেই বলেছি মেরুদন্ডের উপর পুরো শরীর নির্ভরশীল। তাই ঠিকভাবে বসে কাজ না করলে কোমরে ব্যথা হতেই পারে।
- যারা ডেস্কে বসে অফিস আদালতে কাজ করেন তাদের জন্য ভালোভাবে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে কোমর ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়। অর্থাৎ ভুল ভাবে বসার কারণে কোমর ব্যাথা হয়ে থাকে।
- পুরুষের চেয়ে নারীদের কোমর ব্যাথার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বেশি। নারীদের গর্ভকালীন সময় কোমর ব্যাথা আরো বেশি পরিমানে বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত কোমর ব্যথা যে রোগের লক্ষণ
আপনার যদি অতিরিক্ত কোমর ব্যাথার সমস্যা হয় তাহলে আর্টিকেলের এই পর্বটি আপনার জন্য। অল্প সল্প কোমর ব্যাথার সমস্যা হতেই পারে। তবে যদি ঘন ঘন কোমর ব্যাথার সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
আপনার যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে অতিরিক্ত কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কিডনির রোগই একমাত্র রোগ নয়। বিভিন্ন রোগভেদে কোমর ব্যাথার পরিমান উঠানামা করে।
অস্টিওপোরোসিস নামে একটি রোগ রয়েছে যা আপনাদের শরীরের নিঃশব্দে ক্ষতি করে। এর লক্ষণ বোঝা খুব মুশকিল। তবে সব সময় নিজের খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় পেশিতে যন্ত্রণা ও টান অনুভূত হয়। এগুলাও এর সমস্যার কারণ।
কোমরের দুই পাশে ব্যাথার কারণ
দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে কাজ করলে আপনারা খেয়াল করবেন যে হঠাৎ কোমর ব্যাথা শুরু হয়। এর কারণ হচ্ছে কাজ করার সময় সামনে ঝুকে কাজ করলে সামনের মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে থাকে এবং পেছনের মাংসাশী প্রসারিত হয়ে থাকে। এতে শরীরে পেশির ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়ে থাকে।
এই কারণেও অনেক সময় কোমরের দুই পাশে ব্যাথা করতে পারে। তবে কোমরের দুই পাশে ব্যাথার অন্য কারণও থাকতে পারে। যেমনঃ প্রসাব চেপে রাখলে, কিডনি বা মূত্রনালীতে পাথরের সমস্যা দেখা দিলে।
অল্প বয়সে কোমর ব্যাথা হওয়ার কারণ
বর্তমান সময়ে অল্প বয়সীদের মধ্যেও কোমর ব্যাথার সমস্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বে এমনটা দেখা না গেলেও এখন এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
- অনেকক্ষণ যাবত একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে।
- কোনো কাজ করার সময় চেয়ারে শরীরে ভারসাম্য ঠিক রেখে না বসলে।
- ড্রাইভিং করার সময় বেশি সামনে ঝুকে ড্রাইভিং করলে।
- অসময়ে শুয়ে থাকলে বা প্রয়োজনের বেশি সময় শুয়ে থাকলে।
- হঠাৎ কোনো ভারি জিনিস বহন করলে।
কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়
আপনাদের মধ্যে ব্যাথায় ভোগেন না এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। বরং এটা দিন দিন আরো অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শরীরের যেকোনো সমস্যার চেয়ে কোমর ব্যাথার সমস্যা সবচেয়ে বেশি যন্ত্রনাদায়ক। এটি এমন মারাত্মক সমস্যা যে অনেক কোথাও বসলে আর উঠতে পারেন না আর উঠলে বসতে পারেন না।
কোমর ব্যাথার জন্য অনেকে বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন ধরনের পেন কিলার খেয়ে থাকেন। তবে সেটি আপনাকে সাময়িক শান্তি দিলেও ব্যাথা পুরোপুরি অপসারণ করতে পারে না। তাই কোমর ব্যাথা সারানো বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকলে যেহেতু কোমর ব্যাথা হয় তাই এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে না থেকে হাটাহাটি করা উচিৎ। মাঝে মাঝে বাসায় হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে। কোমর ব্যাথা এড়াতে হলে কখনো নরম বিছানায় ঘুমানো যাবে না।
- কোমর ব্যাথার সমস্যা হলে প্রাথমিক ভাবে সেক দেওয়া যেতে পারে। এতে কোমর ব্যাথা থেকে অনেকটাই উপশম পাওয়া যায়। সেক দেওয়ার জন্য গরম পানি বা আয়রন ব্যবহার করতে পারেন। তবে আরো সহজ হয় হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করলে। এতে খালি গরম পানি ব্যাগে ঢেলে সেক দিতে হবে।
- কোমর ব্যাথা কমাতে আদার গুরুত্ব অনেক। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। মানবদেহে পটাশিয়ামের অভাব হলে নার্ভের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই নিয়ম মতো আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে কোমর ব্যাথা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।
- শরীরের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলুদের গুরুত্ব অনেক। এক গ্লাস গরম দুধের সাথে হলুদ গুড়ো মিশিয়ে খেলে কোমর ব্যাথার সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
- দুধ যেমন খাওয়ার জন্য উপকারী তেমনি মেথী বীজ এর সাথে গুড়া দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করে ব্যাথার স্থানে লাগালে ব্যাথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।
- খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। কারণ শরীরে এসব খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে কোমর ব্যাথা বেশি হতে পারে। তাই নিয়মিত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।
মহিলাদের কোমর ব্যাথা হওয়ার কারণ
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের কোমর ব্যাথার সমস্যা সবচেয়ে বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাথা খুব সহজেই নিরাময় হয়ে যায়।আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাথা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। মহিলাদের কোমর ব্যাথা হওয়ার কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
মাসিকের সময়ঃ- মাসিকের সময় মহিলাদের জরায়ু অনেক সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে মহিলাদের কোমর ব্যাথার পরিমান অনেক বেড়ে যায়।
পেশীর টানঃ- হটাৎ কোনো ভারী জিনিস তুললে, ভুল ভাবে কোথাও বসলে বা অতিরিক্ত ব্যায়াম এর ফলেও কোমর ব্যাথার পরিমান বেশি হয়।
মানসিক চাপঃ- মানসিক চাপ এখন প্রায় সবারই নিত্যদিনের বন্ধু। তাই অধিক পরিমাণে মানসিক চাপের প্রভাবেও কোমর ব্যাথার পরিমান বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায়ঃ- গর্ভাবস্থায় হটাৎ মহিলাদের ওজন বৃদ্ধির ফলে এবং হরমোন পরিবর্তনের ফলে মহিলারা কোমর ব্যাথার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
মেরুদণ্ডের সমস্যাঃ- মেরুদণ্ডের যেকোনো সমস্যা হলে তা সরাসরি কোমরে প্রভাব ফেলে।
অন্যান্য কারণঃ- কিডনিতে পাথর হওয়া, এন্ডোমেট্রিওসিস ও ইউটিআই এর মতো অবস্থাও কোমর ব্যাথার কারণ হয়।
মহিলাদের কোমর ব্যাথার প্রতিকার
মহিলাদের যেকোনো অসুস্থতায় তাদের সংসারের ওপর অনেক বেশি খারাপ প্রভাব পড়ে। তারা তাদের সংসারের কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। তাই মহিলাদের কোমত ব্যাথা থেকে প্রতিকারের কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রতিদিন নিয়ম করে বিশ্রাম নিতে হবে। প্রতিদিন নিয়মমাফিক ঘুমালেও কোমর ব্যাথা থেকে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
- যদিও ব্যাথার ঔষধ কখনো স্থায়ী সমাধান নয় তবুও ভালো কোনো কোম্পানির ঔষধ খেলেও ব্যাথা কিছুটা উপশম পায়।
- মহিলারা যদি তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলেও তারা তাদের কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
- নিয়ম করে কিছু ব্যায়াম করলেও কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- কোথাও বসার সময় অবশ্যই শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে বসা উচিৎ। এতে কোমর বয়াথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোমর ব্যাথা সম্পর্কে বেশ কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url