ড্রাগন ফল খাওয়ার নিম - ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে জানুন
ড্রাগন ফল মূলত একটি চায়না ফল। ড্রাগন ফল এমন একটি খাবার যা হাইলোসেরিয়াস নামক ক্যাকটাস গাছে জন্মায়।পূর্বে চীন দেশের মানুষেরা এটিকে ফায়ার ড্রাগণ ফ্রুট এবং ড্রাগণ পার্ল ফ্রুট বলে। তাছাড়া আরো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ড্রাগণ ফ্রুট পরিচিত। যেমন, সুইট ড্রাগন নামটি ভিয়েতনামে পরিচিত, ক্রিস্টাল ড্রাগন নামে থাইল্যান্ডে পরিচিত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে ড্রাগন ফ্রুট নামেই পরিচিত।
পোস্টসূচীপত্রঃড্রাগন ফল নানা রঙের হয়ে থাকে। তবে ডিম্বাকৃতির এই ফলটির নাম শুনলে মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি জেগে ওঠে। কারণ এটা দেখতে যেমন অদ্ভুত নামটাও তেমন অদ্ভুত। এটি আদো খাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকের অনেক মতামত রয়েছে। অনেকের মনে সন্দেহও জাগে। এই ফল বাংলাদেশের লাভ করেছে।
ভূমিকা
আমি আশা করছি, আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ড্রাগন ফলের জাত এবং ড্রাগন ফল কোন মাসে উৎপাদন হয় সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাছাড়া ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনাদেরকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
ড্রাগন ফলের জাত
ড্রাগন ফল মূলত পিয়াটা নামে অপরিচিত। একবার ড্রাগন ফল এর চারা রোপন করা হলে এটি ১৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে থাকে। ড্রাগন ফল এমন একটি ফল যা চাষ করতে খুব বেশি পানির প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ড্রাগন ফলের বিভিন্ন জাতের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আসুন আজকে আমরা ড্রাগন ফলের কিছু উন্নত জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই
সাদা ড্রাগন ফলঃ সাদা ড্রাগন ফলের চারা খুব সহজে পাওয়া যায়। এই জাতের ফলের বাইরের রং গাঢ় গোলাপি এবং ভিতরের অংশ সাদা রঙের হয়ে থাকে। তাছাড়া এই ফলের ভিতরে কালো বীজ ধারণ করে।
লাল ড্রাগন ফলঃ লাল ড্রাগন ফলের বাইরের গায়ের রং গাঢ় গোলাপি। এই ফলের ভেতরের অংশের রং গাঢ় গোলাপি দেখায়। এই ফলের ভেতর অংশেও কালো বীজ বিদ্যমান। এই জাতের ফলটি সাদা ফলটির চেয়ে অনেক গুণ সুস্বাদু। তাই এর চাহিদাওবাজির অনেক বেশি। আর সে কারণে বাজারের দামও বেশি।
হলুদ ড্রাগন ফলঃ হলুদ ড্রাগন ফল বাংলাদেশের খুব কম দেখা যায়। এই ড্রাগন ফলের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ সাদা। হলুদ ড্রাগন ফল লাল এবং সাদা যাতে ড্রাগন ফলের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু এবং মিষ্টি। আর সে কারণেই বাজারে লাল এবং সাদা জাতের চেয়ে হলুদ জাতের ড্রাগন ফল উচ্চ দামে বিক্রি হয়।
ড্রাগন ফল কোন মাসে পাওয়া যায়
বাংলাদেশের ড্রাগন ফলের চাষাবাদ এখন দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে এই ড্রাগন ফল নির্দিষ্ট কিছু সময়ে পাওয়া যায। ড্রাগন ফলের গাছে এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে। ফুল আসার পর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ফলের রূপান্তরিত হয়।
অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ও ফল ধরতে থাকে। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়স একটি গাছে ৫ টি থেকে ২০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটি ফলের ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি পরিপক্ক গাছে ২০টি থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যেতে পারে।
ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি
ড্রাগন ফল চাষ করতে হলে উঁচু বা মাঝারি উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করা সবচেয়ে ভালো। জমি নির্বাচনের পরে ২ থেকে ৩ বার জমি ভালো করে চাষ করে নিয়ে মই দিতে হবে। ড্রাগন ফল ২ ভাবে উৎপাদন করা যায়। অঙ্গজ পদ্ধতি অর্থাৎ বীজ রোপনের মাধ্যমে এবং ড্রাগন ফলের গাছ কাটিং এর মাধ্যম।
তবে বীজের থেকে কাটিং করে ড্রাগন ফলের গাছ লাগানো অধিক লাভজনক। ড্রাগন ফলের গাছ কাটিং করে লাগালে শতভাগ তাড়াতাড়ি ফল ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। কাটিং থেকে যেসব গাছ উৎপাদন করা হয় সেসব গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে।
ড্রাগন ফলের গাছ থেকে চারা উৎপাদন করতে হলে বয়স্ক বা শক্ত শাঁখা জনিত ডাল থেকে ১ফুট বা দেড় ফুট কেটে ছায়াযুক্ত স্থানে বেলে দোআঁশ মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুঁতে রাখলে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়।
ড্রাগন গাছের সেচ ও পরিচর্যা
ড্রাগন এমন একটি ফলের জাত যার সঠিক পরিচর্যা না হলে ফলন ভালো হয় না। যদিও ড্রাগন ফলের গাছে রোগবালাই তেমন একটা হয়না। তবে সঠিক পরিচর্যা না করলে ড্রাগন গাছ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ড্রাগন গাছের চারা রোপনের পরে ভালোভাবে রোদ গাছে পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
যেহেতু ড্রাগন ফলের গাছ থেকে একটা জাতীয় গাছ তাই ড্রাগন ফল চাষ করতে খুব একটা পানির প্রয়োজন হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে ড্রাগন গাছের গোড়ায় যেন কখনো পানি জমে না থাকে। ড্রাগন গাছে পানির প্রয়োজন নেই বলে যে শেষ দিতে হবে না তা নয়। অনেক দিন পর পর ড্রাগন গাছের গোড়ার আগাছা অপসারণ করে সেচ দিতে হবে
প্রয়োজনে জমিতে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ড্রাগন গাছের চারা যখন বড় হবে এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হওয়ার পর যে কয়টি চারা লাগানো হয়েছে তার মাঝখানে ৪ মিটার লম্বা ১টি সিমেন্টের খুঁটি পুততে হবে। চারা গাছগুলো যখন একটু বড় হবে তখন দড়ির সাহায্যে চারাগাছগুলোকে সিমেন্টের খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে যাতে কাজগুলো ভালোভাবে পেরে উঠতে পারে।
প্রতিটি সিমেন্টের খুঁটির মাথায় একটি করে মোটর সাইকেলের টায়ার মোটা তার দিয়ে ভালো ভাবে বেঁধে দিতে হবে এবং ড্রাগন ফলের গাছগুলোকে তারের ভিতর দিয়ে বাইরে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এতে করে গাছে বেশি করে ফল ধরে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
আগেকার মানুষ এই ফলটা কি তা জানতো না। কিন্তু বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন অনেকে আছে যারা কিভাবে ড্রাগন ফল খেতে হয় তা জানে না।
- প্রথমত পূর্ণবয়স্ক অর্থাৎ খাওয়ার যোগ্য বা বেশি পাকা একটি ফল নিন
- তারপর ছুরি বা বটি দিয়ে ফলটি সোজা অর্ধেক করে কেটে নিন
- এবার একটি চামচ দিয়ে চামড়া থেকে ফলের ভিতরের নরম অংশ খেতে পারবেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
ড্রাগন একটি বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে এই ফলটি অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ড্রাগন ফল নানা ধরনের পুষ্টি গুণে ভরপুর। তাছাড়া খনিজ ভিটামিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ড্রাগন ফলের কয়েকটি উপকারিতা নিম্নরূপ
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ডায়াবেটিস রোগীর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড্রাগন এমন একটি ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে জামানত দেহের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ড্রাগন ফল নিমিত খেলে ক্যান্সার ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ ড্রাগন ফলে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান বিদ্যমান। তাছাড়া ড্রাগন ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। তাই ফল খেলে যে কোন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
হজমের জন্য উপকারীঃ খাবার সঠিকভাবে হজমের জন্য ড্রাগন ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানব দেহের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উপকার করে। যেহুতু এটি ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল তাই এটি পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই বলা যায় নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
যদিও ড্রাগন ফল অনেক পুষ্টিগনে ভরপুর। তবে সব সময় মানবদেহের জন্য এই ফলটি উপকারী নাও হতে পারে। এমন অনেকে আছে যারা এই ফলটি খেলে তাদের এলার্জির সমস্যা হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে এই ফলটি না খাওয়াই ভালো। তাছাড়া ড্রাগন ফলে খনিজ ভিটামিন এ সব থাকলেও জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরিও কার্বোহাইড্রেট কম থাকে।
ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা
ড্রাগন ফল শুধু খেয়েছিস তা নয়,ড্রাগন ফল দিয়ে বর্তমানে অনেকের রূপচর্চার কাজেও করে। নিচে ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চার কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হলো
স্কিন কেয়ারঃ ড্রাগন ফল দিয়ে ত্বক স্ক্রাবিং এর কাজ করা যায়। এতে ত্বকে লুকায়িত জমে থাকা ময়লা দূর করে। ড্রাগন ফল দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।তারপর এতে ব্যাসন গোলাপ জল ও দুধ যোগ করুন। তারপর পেস্টটি মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মরা সেল গুলো পুনর্জীবিত হবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠকগণ, আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম এবং ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে আমাদের আর্টিকেল পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন খবরাখবর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করে রাখুন এবং আপনাদের পরিচিত জনের সাথে আমাদের ওয়েবসাইটটি Share করুন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url