বন্ধু চুলা তৈরির পদ্ধতি - বন্ধু চুলার সুবিধার সম্পর্কে জানুন

বর্তমান সময়ে বন্ধু চুলা এমন একটি সুবিধাজনক কারণের নাম যা ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ অনেক উপকৃত হচ্ছে। বন্ধু চুলা তৈরির পদ্ধতি ও এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
পোস্টসূচীপত্রঃযদিও আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক সুন্দর তবুও বিভিন্ন কারণে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কারণ আমাদের দেশে এমন অনেক কারণ আছে যেগুলো আমাদের দেশের পরিবেশ নষ্ট করতে যথেষ্ট। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে বায়ু দূষণ। তাই আজকে আমরা বায়ু দূষণ রোধে বন্ধু চুলার উপকার সম্পর্কেও জানবো।

ভূমিকা

আজকের বিষয় যেহুতু বন্ধু চুলা তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করবো বন্ধু চুলা কি,বন্ধু চুলা তৈরির পদ্ধতি,এর সুবিধা কিভাবে পাওয়া যায় এবং এটি কেমন ব্যয়বহুল সে সম্পর্কে জানবো।

বন্ধু চুলা কি

অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশের গ্রামের সাধারণ মানুষ মাটির চুলা ব্যবহার করে আসছিল। তবে মাটির চুলা ব্যবহার করলেও এটি মানুষের একদিক দিয়ে উপকার করলেও ক্ষতির কারণ ছিলো বেশি। মাটির চুলা ব্যবহার এর ফলে এর থেকে উৎপাদিত ধোঁয়া মানুষের মানুষের নিঃস্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করে। 

এর ফলে মানুষের শরীরের অনেক ক্ষতি সাধন করে। এই সমস্ত বিষয় বস্তু চিন্তা করে সরকার ২০০৬ সালে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড মাটির চুলা ব্যবহারের পরিবর্তে চিমনিযুক্ত কংক্রিটের চুলা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তাছাড়া তাদের সংস্থাতেই এই চুলা তৈরি করা চালু হয়েছে।

বন্ধু চুলা তৈরির পদ্ধতি

মাটির চুলা যেভাবে তৈরি করা হয় ঠিক একইভাবেই বন্ধু চুলা তৈরি করা যায়। তবে বন্ধু চুলা যেহুতু মাটির না তাই এটি তৈরির পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। নিম্নে বন্ধু চুলা তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
বন্ধু চুলা তৈরি করতে হলে প্রথমে একটি ফ্রেম তৈরি করতে হয়। এরপর সিমেন্ট,বালু এবং পানি দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করতে হয়।

মিশ্রণটি এমন ভাবে বানাতে হবে যাতে মিশ্রণটি খুব পাতলা না হয়। এরপর মিশ্রনটি ভালোভাবে ফ্রেমে ঢেলে দিতে হবে। যেখানে যেখানে চুলার ফাকা রাখা প্রয়োজন সেখানে সেখানে কলা গাছ দিয়ে বা লোহা দিয়ে তৈরি গোল ফ্রেম বসিয়ে রান্না করার জন্য প্রয়োজনীয় জালানী বা খড়ি প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

তারপর এর জন্য একটি চিমনি বা মোটা পাইপ ও তৈরি করা লাগবে। যা দিয়ে রান্না করার সময় কালো ধোয়া বের হয়ে যেতে পারে। এভাবেই একটি বন্ধু চুলা তৈরি করা হয়।

বন্ধু চুলার সুবিধা

মাটির চুলা আর বন্ধু চুলা দেখতে যদিও একই রকম তবে এদের কাজের ভিন্নতা রয়েছে। পূর্বে আমাদের দাদি-নানিরা মাটির চুলায় রান্না করতে বেশি পছন্দ করতেন। তবে এখন গ্যাসের চুলা প্রচলিত হওয়ার পর এটা অনেক বেড়ে গেছে। তবে গ্রামে এখনো অনেকে মাটির চুলায় রান্না করেন। তবে মাটির চুলায় অনেক ধোঁয়া হয় যা মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

তাই বর্তমানে জার্মানি প্রযুক্তিতে বন্ধু চুলা অর্থাৎ সিমেন্টের চুলা ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়। এই চুলা ব্যবহারে বায়ু দূষণ রোধ হবে এবং মানুষের দেহের মধ্যে যে ক্ষতিকর বাতাস প্রবেশ করে সেটা থেকেও মানুষ মুক্তি পাবে।তাছাড়া বন্ধু চুলায় জালানিও কম ব্যবহৃত হয়। প্রায় শতকরা ৫০-৬০ ভাগ জালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। এছাড়া হাড়ি পাতিল কম ময়লা হয় এবং রান্নাঘর দূষণ মুক্ত রাখে।

মানুষ ও পরিবেশ বাঁচাতে বন্ধু চুলা

রান্নার কাজে যে ধরণের মাটির চুলা ব্যবহার করা হয় তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া নারী ও শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই কালো ধোঁয়া মানুষের শরীরে যক্ষ্মা,হাপানি,হার্টের সমস্যা,চোখের সমস্যা এবং বিভিন্ন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, এই দূষিত ধোঁয়ার কারণে প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার শিশু এবং ৩২ হাজার নারী মারা যান।

তাই ধোঁয়ার মারাত্মক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এখন মানুষ বন্ধু চুলার ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্ধু চুলা একটি উন্নত প্রযুক্তির চুলা। বর্তমানে এটি গ্রাম ছাড়াও এখন শহরেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বাসা,হোটেল,ছাত্রাবাস,পুলিশ ক্যাম্প,হাসপাতাল,সেনানিবাস প্রভৃতি স্থানে বন্ধু চুলা ব্যবহার হচ্ছে। 

পূর্বের তৈরি মাটির চুলায় অনেক অসুবিধা রয়েছে। যেমন- জালানি বেশি প্রয়োজন হয়, রান্না হতে সময় লাগে বেশি, রান্নাঘরে কালি হয় এবং হাড়ি পাতিল বেশি ময়লা হয়। তাই মানুষ এবং পরিবেশ বাঁচাতে বন্ধু চুলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

বন্ধু চুলার বিক্রয় কেন্দ্র

বন্ধু চুলা মূলত সরকারি সেবা দানের চুলা। এই চুলা সরকারি ভাবেই বিক্রি করা হয়। তবে এখন অনেক সংস্থা আছে যারা বন্ধু চুলা তৈরি করে গ্রামে-গঞ্জে ভ্যানে করে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। তাই এখন যে কেউ চাইলেই বন্ধু চুলা কিনে ব্যবহার করতে পারেন।

বন্ধু চুলার দাম

বন্ধু চুলা তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে সারা বাংলাদেশে সরকারি ভাবে প্রায় ৫ হাজারের বেশি উদ্দ্যোক্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া নিয়োগকৃত উদ্যোক্তাদের পাঁচ হাজার করে অর্থ প্রদান করা হয়েছে শুধুমাত্র বন্ধু চোলা তৈরীর জন্য। যেহেতু এই চুলা জার্মান প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি তাই সরকারিভাবে এই চুলার স্থাপনের দায়িত্ব ও ওয়ারেন্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তাছাড়া অন্যান্য সংস্থাগুলো বর্তমান বাজারে ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ করে বন্ধু চলা বিক্রয় করছে। তবে বন্ধু চুলার আসল মূল্য মোটামুটি ৮০০ টাকা মত।যেহেতু বন্ধু চুলার মূল্য ৮০০ টাকা তাই অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সরকার বাকি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠকগণ, আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে বন্ধু চুলা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url