আপেল খাওয়ার নিয়ম - আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

আপেল একটি ফল। আপেল রোসাসি পরিবারের মেলিয়াসডো মেস্টিকা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। আপেল অনেক মিষ্টি জাতীয় একটি ফল। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই আপেলের চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষকৃত প্রজাতি হচ্ছে জেনাস ম্যলুস। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে আপেলের উৎপত্তিস্থল হিসেবে মনে করা হয়।
পোস্টসূচীপত্রঃহাজার হাজার বছর ধরে এশিয়া এবং ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশের মানুষ আপেলের চাষ করছে। পূর্বের প্রচলিত ইংরেজিতে আপেল শব্দটির বানান এইপেল ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ধীরে পাল্টে আপেলে রুপান্তরিত হয়।

ভুমিকা

আপেল আমাদের উপকারী একটি ফল। আপেল কখন খাওয়া উচিত এবং কখন খাওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে আমরা জানবো। তাছাড়া আপেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কেও জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি বিস্তারিতভাবে পড়তে হবে।

কখন আপেল খাওয়া ভালো

আপেল এমন একটি ফল যা আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং যে কোন অসুখের ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রত্যেকদিন একটি করে আপেল খাবার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন।

আপেল এমন একটি ফল যেই ফলে প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে। যেহেতু ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে সেহেতু আপেল প্রতিদিন সকালে খাওয়াই ভালো। এমন অনেক পুষ্টিবিদ রয়েছেন যারা একই নিয়ম অনুসরণ করতে বলেন।

আপেল খাওয়ার উপকারিতা

আপেল এমন একটি ফল যেটাতে প্রায় সকল ধরনের পুষ্টিগণ বিদ্যমান। আপেল খেলে আমাদের শরীর অনেক রকমের উপকার হয়। নিচে আপেল খাওয়ার গুনাগুন গুলো বিশ্লেষণ করা হলোঃ

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ মরণ ব্যাধির মধ্যে ক্যান্সার সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাধি। ক্যান্সার একবার কারো শরীরে বাসে বেঁধে ফেললে সেখান থেকে পরিত্রান পাওয়া অসম্ভব। ক্যান্সারের কোন ঔষধ নেই। একটি প্রতিরোধ করায় মূলত এর প্রধান ঔষধ। আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব সাহায্যকারী একটি ফল। তাই প্রতিনিয়ত আপেল খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে

হাঁপানির তীব্রতা কমায়ঃ আপেল এমন একটি উপকারী ফল যা মানুষের হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে। হাঁপানি বেশি হওয়া বা কম হওয়া নির্ভর করে আপেল খাওয়ার পরিমাণের ওপর।তাছাড়া প্রতিদিন যদি একটি করে আপেল খাওয়া যায় এতে করে হাঁপানির তীব্রতা কমে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে আপেলঃ বর্তমান সময়ে প্রতিটি দেশেই ডায়াবেটিসের সমস্যা হু হু করে বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে এই সংখ্যা কমার কোনো নাম নেই। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও আপেলের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৮ শতাংশ কমে যায়। তার 
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রতিদিন একটু করে আর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

হার্টের ঝুঁকি কমায়ঃ আপেলের পোস্টটি কোন অভাব নেই। সব রকমের পোস্টটি কোন আপেরে বিদ্যমান। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আপেলের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ থাকে ২.৪ গ্রাম যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে।

প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২০% কমে যায়। তাই বলতে পারি হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমাতেও প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ মানুষের শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক এবং কর্মক্ষম রাখার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপেলের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রকার রোগের সাথে লড়াই করার জন্য প্রতিদিন সকালে একটু করে আপেল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাছাড়া আপেলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,পটাশিয়াম,ফসফরাস এবং ভিটামিন সি থাকার কারণে প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরের জন্য খুব উপকার হবে।

ওজন কমাতে আপেলঃ বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ তাদের নিজেদের ওজন নিয়ে অনেক চিন্তিত। আপেল এমন একটি ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে। যেহেতু আপেলে প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে তাই প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে মানুষের ক্ষুধা ভাব কমে। এতে করে ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন আসে এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে আসে।

মানসিক সুস্বাস্থ্য আপেলঃ শরীরের সবকিছু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চললে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব। প্রতিনিয়ত আপেল খেলে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন গুলো বেশি কার্যকরিতা লাভ করে। আবালের বিদ্যমান বহুল পুষ্টিকর উপাদানের কারনে মস্তিষ্কের গঠন ঠিক থাকে এবং নিউরনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেঃ আপেলের মধ্যে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের সজীবতাকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, জাতকের কালো দাগ ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মলিনতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।

তাছাড়া অনেকে আপেলের পেস্ট তৈরি করে তার সাথে মধু এবং দুধ মিশিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করে। এতেও ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মলিনতা বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা

  • হৃদপিন্ডের জটিল যে কোনো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
  • গর্ভে থাকা সন্তানের ওজন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
  • গর্ভে থাকা সন্তানের মস্তিষ্ক বিকশিত করে এবং স্মৃতিশক্তি ধারণক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • মানবদেহে হিমোগ্লোবিনের অভাব পূরণে আপেল অপরিসীম।
  • গর্ভবতী নারী ও শিশুর হাড়ের গঠন মজবুত করতে আপেলের গুরুত্ব অপরিসীম
  • আপেলে ফলিক অ্যাসিড থাকার কারণে জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়
  • গর্ভবতী নারী নিয়মিত একটি করে আপেল খেলে গর্ভের সন্তানের এলার্জি জাতীয় এবং অ্যাজমা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সে কমে যায়

আপেল খাওয়ার উপকারিতা

আপেলের মধ্যে ফাইবার জাতীয় উপাদান বেশি। যার কারণে আপেল খেলে মানুষের ক্ষুধা অনেকাংশে কমে যায় বা ক্ষুধা কম লাগে এবং পেট ভরা থাকে। কিন্তু পরিমাণে আপেল খেলে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যেমন - বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

আপেলের মধ্যে কার্বোহাইড্রেটও বিদ্যমান। অধিক পরিমাণে আপেল খেলে মানবদেহে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তার সাথে মানবদেহের সুগার লেভেল কমে যায়। সেক্ষেত্রে, ডায়াবেটিস রোগীদের একটু সতর্ক থাকা উচিত।

আপেল চাষের জন্য অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশক মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।যেহেতু আপেলে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেশি তাই বেশি আপেল খেলে ওজন কমার চেয়ে বৃদ্ধি হতে পারে বেশি। তাই পরিমাণ মতো আপেল খাওয়াই ভালো।

দীর্ঘ সময় ধরে মানব দেহে এসিডিটি বাসা বেঁধে রাখলে রাখলে আপেল খাওয়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।আপেল অধিক পরিমাণে খেলে আপেলের মধ্যে থাকা এসিড দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি করতে পারে।

রাতে আপেল খেলে কি হয়

রাতে আপেল খাওয়া একদম ঠিক নয়। রাতে আপেল খেতে বদহজমের সমস্যা হতে পারে এবং আমাদের শরীরের অন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাছাড়া রাতে আপেল খেলে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়। ফলে শরীর অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। তাই রাতেও বিকেলে আপেল খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

খালি পেটে আপেল খেলে কি হয়

সকালে খালি পেটে আপেল খেলে উপকার পাওয়া যায়। খালি পেটে আপেল খাওয়া ভালো বা সকালে খালি পেটে পানি খেয়ে আপেল খাওয়ার আরো ভালো। হার্টের সুস্থতার জন্য খালি পেটে আপেল খাওয়া খুবই উপকার। এছাড়া আপেলে ভিটামিন সি পটাশিয়াম ও অন্যান্য উপাদানগুলোর কারণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বিশ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

আপেল খেলে কি গ্যাস হয়

হ্যাঁ, অতিরিক্ত আপেল খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ আপেলের মধ্যে এসিড থাকে এবং এই এসিড পাকস্থলীর এসিডকে বাড়িয়ে দেয়। বেশি আপেল খেলে আপেলে উপস্থিত অ্যাসিড মানবদেহের পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর যোগান দেয় এর ফলে অনেকেরই পেটের গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
আপেল খেলে কি ওজন বাড়ে

আপেলে এমন একটি ফল যা নিয়মিত খেলে শরীরের ওজন কমতে শুরু করে। কারন আপেল একটি আঁশ জাতীয় ফল। প্রতিদিন নিয়ম করে আপেল খেলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাস কমে যায়। এতে করে খাওয়াতে অনেক পরিবর্তন আসে। তাই বলা যায় আপেল খেলে মেদ ঝরতে শুরু করে এবং ওজন কমে যায়।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় পাঠকগণ, আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে আপেল সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে আমাদের আর্টিকেল পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন খবরাখবর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করে রাখুন এবং আপনাদের পরিচিত জনের সাথে আমাদের ওয়েবসাইটটি Share করুন

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url