অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম - মুখের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
আমাদের প্রকৃতিতে এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে আসে। এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আজকে আমরা এমন একটা উদ্ভিদ নিয়ে কথা বলতে চলেছি যে উদ্ভিদের ব্যবহার করতে পারি
পোস্টসূচীপত্রঃআজকে আমরা মূলত অ্যালোভেরা নামক প্রাকৃতিক উদ্ভিদ নিয়ে নানা ধরনের তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। আশা করি অ্যালোভেরা সম্পর্কে আপনাদেরকে আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারবো। তাই অ্যালোভেরা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অ্যালোভেরা কি
অ্যালোভেরা আসলে একটি বৈজ্ঞানিক নাম। এর বাংলা হচ্ছে ঘৃতকুমারী। তাছাড়া এটি ইংরেজিতে Medicinal aloe বা Burn plant নামে পরিচিত।এটি এলো প্রজাতির রসালো জাতীয় একটি উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা অর্থাৎ কৃতকুমারী উদ্ভিদ দেখতে অনেকটা ক্যাকটাসের মত।
অ্যালোভেরার উৎপত্তিস্থল মরুভূমি অঞ্চলে। এটি প্রায় ৬ হাজার বছর আগে মিশরের মরুভূমিতে আবিষ্কৃত হয়। অ্যালোভেরা উদ্ভিদ দিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরা উদ্ভিদের কাজ কি
অ্যালোভেরা উদ্ভিদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের ক্ষতি ব্যবহার করা হয়। খাওয়া থেকে শুরু করে শরীরের যত্নেও অ্যালোভেরা উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। এটি আমাদের শরীরের উপকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। এর ভেতরের যে রসালো লালার মতো পিচ্ছিল যে শাঁস থাকে সেটাই মূলত ব্যবহার যোগ্য।
অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম
অ্যালোভেরা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উপস্থিতি রয়েছে। এর ফলে এটি জুস বা অন্য কোনো উপায়ে সেবন করলে আমাদের শরীরের অনেক ক্যালরি এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। মূলত প্রতিদিন প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার ১৪ মিনিট আগে ১ চামচ করে অ্যালোভেরার জুস খেতে পারেন।
এভাবে অ্যালোভেরা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া উষ্ণ গরম পানির সাথে, মধুর সাথে বালেবুর সাথে মিশিয়ে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
খালি পেটে অ্যালোভেরা খেলে কি হয়
আমরা আগেই জেনেছি অ্যালোভেরাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে। এতে করে অ্যালোভেরা জুস খেলে এটি শরীরে অনেক দ্রুত কাজ করে। খালি পেটে খেলে অ্যালোভেরার জুস খেলে এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে এবং হজমেও অনেক দ্রুত কাজ করে। তাছাড়া খালি পেটে অ্যালোভেরা খাওয়া ত্বক ও চুলের জন্যও অনেক উপকারী।
অ্যালোভেরা খেলে কি ক্ষতি হয়
যদিও অ্যালোভেরা অনেক উপকারী একটি উদ্ভিদ। তবে অনেক সময় অনেক উপকারী বস্তুও মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। সবকিছুই ভাল এবং খারাপ উভয় দিক রয়েছে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অ্যালোভেরা অনেক বেশি ক্ষতিকর।
যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে অ্যালোভেরা খাওয়ার কারণে ত্বকে ফুসড়ি,চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া,বুকে ব্যাথা হওয়া এবং গলায় জ্বালা পোড়া হওয়ার মতাও লক্ষণ দেখা দেয়। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী কোন মহিলার অ্যালোভেরার জুস খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এতে গর্ভপাত এবং জন্মগত ত্রুতির কারণ হতে পারে।
তাছাড়া অতিরিক্ত অ্যালোভেরার জুস সেবনের ফলে ক্যান্সারের ঝুকিও হতে পারে। আবার অনেক সময় কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অ্যালোভেরার জুস পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ। দিনে ১-২ চামচ করে তিন বেলা খেলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এর বেশি খেলে শরীরে অনেক সমস্যা হবে।
রূপচর্চায় অ্যালোভেরা
গরমে বা শীতে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা খুব জরুরি। আপনি যদি বাসায় অ্যালোভেরা দিয়ে ময়েশ্চারাইজার তৈরী করে ব্যবহার করেন সেটা আপনার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া সরাসরি এর জেলও ব্যবহার করা যায়। আপনারা যখন রোদে ঘোরাফেরা করেন তখন আপনাদের মুখে তীব্র রোদের কারণে কালো দাগ পড়ে যায়।
এর প্রতিকার হিসেবে আপনারা বাইরে থেকে এসে ঘরে অ্যালোভেরার জেল লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। ঠোঁট আমাদের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় একটি অংশ। ঠোঁটের যত্নেও অ্যালোভেরা জেল অনেক উপকারী। ঠোঁট এর রং উজ্জ্বল রাখতে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা খুব উপকারী।
অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের তাপের যে প্রদাহ তা অনেক কমে যায়। তারপর ত্বকের ওপরের ব্রনের যে দাগ সেগুলো ধিরে ধিরে মুছে যায় এবং ত্বকের ভেতরের যে ক্ষতগুলো থাকে সেগুলো পূরণেও সাহায্য করে।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা
অন্যান্য অংশের মতো চুলও মানুষের শরীর একটি বিশেষ অংশ। চুল মানুষের শরীরের বাহব্যক সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি কর।তাই চলে যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল অনেক উপকারে আসে।
চুলের শুষ্ক ভাব দূর করতে অ্যালোভেরা জেল অনেক দ্রুত কাজ করে এবং নিয়মিত চুলে অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহারে চুল পড়া এবং চুলে খুশকি হওয়া থেকে বিরত থাকে। তাছাড়া অ্যালোভেরা জেল এর সাথে আমলকির রস মিশিয়ে চুলে লাগালে চুলের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায়।অ্যালোভেরা, মধু এবং নারকেল তেল রুক্ষ চুলকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
এই তিনটি উপাদান মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে মাঝেমধ্যে গোসল রেখে চুলে লাগাতে পারেন। পেস্ট তৈরি করতে হলে মধু নিতে হবে ১ চা চামচ ২ চা চামচ নারকেল তেল এবং ২ চামচ অ্যালোভেরা মিশিয়ে নিতে হবে।
রেকটি পেস্ট তৈরী করতে পারেন সেটা হচ্ছে দই এবং অ্যালোভেরা দিয়ে। তারপর লেবুর রস,অ্যালোভেরা এবং আমলার রস দিয়েও পেস্ট তৈরী করে ব্যবহার করলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ
অ্যালোভেরা এমন একটি উদ্ভিদ যা দিয়ে নানা ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। যেমন রোজ সকালে এক চামচ করে অ্যালোভেরা রস পানির সাথে মিশে জুস করে খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক জাতীয় ওষুধ তৈরিতে অ্যালোভেরা প্রধান উপাদান।
অ্যালোভেরার রস থেকে জুস করে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক দ্রুত সেরে যেতে পারে। তাছাড়া অ্যালোভেরা যে কোনো ভাবে সেবনের ফলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেহেতু অ্যালোভেরা অনেক পুষ্টিনে ভরপুর তাই জন্ডিস নিরাময়েও অ্যালোভেরা খুব দ্রুত কাজ করে।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
যদিও আমরা অ্যালোভেরা উপকারিতা সম্পর্কে আগের বেশ কয়েকটি অপশনে জানতে পেরেছি। অ্যালোভেরা নিয়মিত পরিমাপ অনুযায়ী খেলে শরীরের হার্টের অবস্থা ভালো থাকে। অর্থাৎ হার্ট এটাকে ঝুঁকি অনেক বেশি কমে যায়। তাছাড়া চুলে এবং মুখে লাগানোর উপকারিতা তো রয়েছেই।
নিয়মিত এলোভেরা সেবনের ফলে শরীরের চেয়ে অধিক তাপ রয়েছে তা বের করে দিতেও সাহায্য করে। আপনার ত্বক যদি কোন কারনে পুড়ে যায় বা ছিলে যাই সে ক্ষেত্রেও আপনি চাইলে অ্যালোভেরা জেল ক্ষতস্থানে লাগাতে পারেন। এটি আপনার ক্ষতস্থানকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরার অপকারিতা
অ্যালোভেরা যেমন খুব উপকারী একটি উদ্ভিদ তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহারে মাঝে মাঝে অনেক ক্ষতির সম্মুখী। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অ্যালোভেরা ক্ষতিকর একটি পদার্থ। কারণ অ্যালোভেরা সেবনের ফলে এলার্জির পরিমাণ আরো বেশি বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে ত্বকে ফুসরি বের হওয়া, ত্বক জ্বালাপোড়া এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় অ্যালোভেরা বেশি ব্যবহার করলে তো অতি দ্রুত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া অ্যালোভেরা বেশি সেবনের ফলে শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমাপ অনুযায়ী এটি গ্রহণ করা উচিত।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠকগণ,আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url