নিম পাতার বৈশিষ্ট্য - নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রাকৃতিকভাবে উপকারি উদ্ভিদের মধ্যে নিম গাছের কথা না বললেই নয়। নিমের পাতার বৈশিষ্ট্য এবং এর উপকারিতা অনেক বেশি। এটি ঔষধি গাছ হিসেবেও কাজ করার ক্ষমতা রাখে। নিম অনেক গুণাবলী সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ।এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ।
পোস্টসূচীপত্রঃনিম গাছ অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়। এর পাত, ফল, কাঠ সবকিছুই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন না কোন কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এটিকে একটি উপকার বৃক্ষ বলা চলে। নিম গাছ সাধারণত আপনাদের বাড়ির আঙিনায় এবং আশেপাশে লাগালে এটি আপনাদেরকে ছায়া দিয়েও উপকার করবে।

নিম পাতার বৈশিষ্ট্য

নিম গাছের সবকিছুই আপনাদের জন্য খুবই উপকারী। এর পাতার বৈশিষ্ট্যও অতুলনীয়। যেহেতু নিম একটি ওষুধি ও ভেষজ উদ্ভিদ তাই এটি থেকে অনেক উপকারী ওষুধ তৈরি করা হয়। ভারতে প্রায় গত ৪০০ বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। নিম গাছের পাতা অতি পরিচিত। তাই একে অন্য কোন পাতার সাথে গুলিয়ে ফেলা যায় না। খুব সহজেই এই পাতাটি শনাক্ত করা যায়।

নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতা বিভিন্ন রকম কাজে ব্যবহার করা যায়। পেট খারাপ হলে, ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে, ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, দাঁত বা মাড়ির সমস্যা হলে, পেটে কৃমি জাতীয় সমস্যা হল, চোখের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এবং লিভার সমস্যার কারণে নিম পাতা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন জন্ম জনিত বা এলার্জি জাতীয় রোগ নিরাময় নিম পাতার ব্যবহার অপরিহার্য।

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

আপনারা সবাই নিজের ত্বক নিয়ে হয়তো সবসময় অনেক চিন্তিত থাকেন। নিজের ত্বক সুন্দর রাখতে আপনারা বাজার থেকে নানা ধরনের প্রসাধনী কিনে ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনারা জানেন কি নিম পাতা আপনাদের ত্বকের যত্নে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক প্রসাধানীর কাজ করবে। নিচে ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহারবিধি উল্লেখ করা হলো-

উপায় ১ঃ এক মুট মতো নিম পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে ১ ঘণ্টা মতো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সেটি ব্লেন্ডারে প্লেন করে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১ ঘন্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।

উপায় ২ঃ কয়েকটি তুলসী পাতা, আরো কয়েকটি নিমপাতা এর সাথে পুদিনা পাতা ও একটি লেবুর রস এ সমস্ত কিছু একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ফেলতে হবে। এসব কিছু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি হলে এর সঙ্গে কিছু পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেজ তৈরি করুন। এই পেস্টটি ১৫ মিনিট মতো মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

উপায় ৩ঃ এক মুঠো নিম পাতা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর সেই গুঁড়োর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেজ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর সেই পেস্টটি ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে দিয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৪ঃ ১ চা চামচ নিম পাতার গুঁড়ো সাথে পরিমান মত বেসন ও টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর এই পেস্টটি ১৫ মিনিট মতো মুখে লাগিয়ে দিয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৫ঃ একমুঠো মত নিম পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিন। এরপর এর সাথে ১ টেবিল চামচ মত মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে দিয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৬ঃ নিম পাতা গুঁড়োর সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে। একটি ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে দিয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৭ঃ ২ টেবিল চামচ নিম পাতার গুঁড়ো ও ২ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়োর সাথে সামান্য পানি ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ১৫ মিনিট মতো মুখে লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এই সমস্ত উপায় গুলো অনুসরণ করলে ত্বক ভালো থাকে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। আপনারা চাইলে নির্ভয়ে এই উপায় গুলো ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।

চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নেও নিমপাতার গুরুত্ব অপরিসীম। নিমপাতা ব্যবহারে চুলের খুশকি সমস্যা দূর হয়ে যায়। তাছাড়া চুল ঝলমলে করতে ও বৃদ্ধিতেও নিম পাতা ভালো কাজ করে।চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার নিম্নরূপ-

উপায় ১ঃ যেকোনো ভালো ব্র‍্যান্ডের ২৫০ মিলি নারিকেল তেল নিয়ে চুলোয় গরম করতে হবে। এরপর একমুঠো নিম পাতা ভালো করে পরিষ্কার করে নারিকেল তেলের মধ্যে দিতে হবে। ৪-৫ ঘন্টা পর তেলটি ভালো করে ছেকে নিয়ে প্রায় রাতে ঘুমানোর আগে চুলে ম্যাসাজ করুন এবং পরের দিন শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

উপায় ২ঃ ১টেবিল চামচ টকদই এর সাথে ১ টেবিল চামচ নিম পাতা গুঁড়ো দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এরপর সেটি চুলে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৩ঃ ১ মুঠো নিমপাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর নিমপাতা গুলোকে ভালো করে বেটে ১ চা চামচ মধু ও কয়েক ফোটা গোলাপজল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরী করতে হবে। সেটি চুলে লাগানোর ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৪ঃ নিমপাতার রস ১ চা চামচ, আমলকির রস ১ চা চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টকদই নিয়ে পেস্ট তৈরী করে চুলে লাগাতে হবে। পেস্টটি চুলে লাগানোর ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

উপায় ৫ঃ তাছাড়া আপনি এমনিতেও নিমপাতা বেটে চুলে লাগাতে পারেন এবং ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন।

এই সব উপায়গুলো আপনাদের চুলকে খুশকি মুক্ত, সুন্দর ও ঝলমলে করে তুলবে।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতার এমন ঔষধি গুণ রয়েছে যে, যদি আপনাদের শরীরে চুলকানি বা এলার্জি জাতীয় কোনো সমস্যা থাকে তাহলে নিম পাতা পানিতে সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে তারপর সেই পানিতে গোসল করলে চুলকানি বা এলার্জি থেকে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতার রস শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান। এটি মানবদেহের রক্তে উপস্থিত অধিক সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে সঠিক ভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত নালীকে প্রসারিত করতেও সাহায্য করে।

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে নিয়মিত খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে রক্তে উপস্থিত থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো সব শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটি গোলমরিচের সাথে কয়েকটি নিমপাতা বেটে খেলে ডায়াবেটিস এর সমস্যা খুব দ্রুত সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাড়াতাড়ি ফল পেতে চাইলে অবশ্যই নিমের পাতা গুলো কচি এবং ভালো পাতা হতে হবে।

নিম পাতার উপকারিতা

প্রায় সবদিক দিয়ে দেখতে গেলে বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে নিম পাতার উপকারিতাই বেশি। নিম পাতা খাওয়া থেকে শুরু করে শরীরের যত্নে সবকিছুতেই শুধু উপকার করে যাচ্ছে। তাই নিম পাতার উপকারের দিকগুলো চিন্তা করে এটি ব্যবহার করলে ফল সবসময় ভালোই পাওয়া যায়।

নিম পাতার অপকারিতা

সবকিছুরই উপকার এবং অপকার রয়েছে। নিমপাতার উপকার সম্পর্কে আপনারা অনেকক্ষণ জানলেন। এবার আসুন জেনে নিন এর অপকার সম্পর্কে-

যদি আপনাদের মধ্যে কারো নিম পাতায় ব্যবহারে এলার্জি জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তার নিম পাতা থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়। কারণ এতে এলার্জি আরো বেড়ে যায়। তাছাড়া গর্ভবতী নারীদের নিমপাতা জড়িত কোনো কিছুই করা উচিৎ নয়।

কারণ এটি গর্ভবতী নারীর শরীরের শুক্রাণুকে প্রত্যাখ্যান করে গর্ভপাত করানোর সম্ভাবনা তৈরি করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের মধ্যে অল্পতেই ক্লান্তি বা দূর্বলতা কাজ করে তাদের কখনো নিমপাতা বা রস সেবন করা উচিৎ নয়। কারণ নিমপাতা এমতাবস্থায় শরীরের দূর্বলতা আরো বাড়িয়ে দেয়।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে নিম গাছ ও এর পাতার ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url