শীতকালে চুল পড়ার কারণ এবং চুলের যত্ন সম্পর্কে জেনে নিন

চুল মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি অংশ। মানুষের চুল শীতকালে বেশি পড়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে। আর শীতকালে চুল পড়ার কারণ অনেক কিছু হতে পারে। কিন্তু এর সঠিক যত্ন নিলে চুল পড়া রোধ হতে পারে।
পোস্টসূচীপত্রঃশরীরের যে কোনো অংশের মতো চুল মানবদেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে একটা। সব মানুষের চুল একই রকম হয়না। এর আকার,রঙ একেক জনের একেক রকম। এর সঠিক বিকাশ ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সঠিক যত্ন নেওয়া খুব বেশি জরুরী।

ভুমিকা

আজকে আপনাদেরকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চুল সম্পর্কে অনেক তথ্য বিস্তারিত ভাবে দেয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন এবং উপকৃত হতে পারবেন।

চুল কি

আপনারা আগেই জেনে ফেলেছেন যে চুল মানুষের শরীরের কত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। তবে চুল নামক এই সরু তন্তু শুধু মানুষের ত্বকের বহিঃস্তরে অবস্থিত। এটি মানুষের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে কয়েকগুণ।

অনেকে আবার নিজেকে সুন্দর দেখাতে তাদের নিজেদের চুলকে অনেকভাবে কেটে কেটে পরিবর্তন করতে পারে। নানা রকম ভাবে চুল কাটার কারণে কাউকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে আবার কাউকে দেখতে বিশ্রীও লাগে। তাই চুল অবশ্যই সাবলীলভাবে পরিবর্তন করা উচিৎ।

শীতকালে চুল পড়ার কারণ

মানব দেহের জন্য চুল খুব সংবেদনশীল অংশ। তাছাড়া চুল এমন একটি বস্তু পরিপার্টি করে না রাখলে কাউকে দেখতেও খুব একটা ভালো লাগে না। তাই সব সময় চুলের যত্ন নেওয়া খুব জরুরী। আমাদের দেশের ঋতুভেদে আবহাওয়া পরিবর্তনশীল।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চুলের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে থাকে। এর মধ্যে শীতকালে চুল পড়া কারণ অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। প্রায় প্রত্যেক ঋতুতেই চুল পড়া সমস্যা রয়েছে। তবে শীতকালে চুল পড়া সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়া।

গরমকালের ও বর্ষাকালে যদিও বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকলেও শীতকালে তো অনেক কমে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়ার কারনে মাথায় যে স্ক্যাল্প থাকে সেখানে ঠিক ভাবে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না সে কারণেই চুলের গোড়া শুকিয়ে থাকে আর এই থেকেই চুল উঠে যাওয়া বা পড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়।

শীতকাল ছাড়াও আরো যে কারণে চুল পড়তে পারে

চুল যেকোন সময় পড়তে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ছাড়াও চুল পড়ার কারণে রয়েছে। নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • শরীরে হরমোন জনইত কোন সমস্যা দেখা দিলে চুল পড়ার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মহিলাদের গর্ভাবস্থায় এ সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। কারণ তখন একজন গর্ভবতী মহিলাকে হরমোন জনিত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
  • চুলের গোড়ার স্ক্যাল্প কোন কারনে শুকিয়ে গেলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।
  • কোন কারনে দুশ্চিন্তা করলেও চুল পড়ে যাওয়া সময় থাকে।
  • তাছাড়া অনেক সময় জিনগত কারণেও চুল পড়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আপনার অনেক সময় না জেনে শুনে বিভিন্ন রকমের তেল চুলে ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে যদি কোন ভেজাল উপাদান থাকে এতেও চুল পড়ার সময় থাকে এবং চুলের ক্ষতি হয়।
  • সঠিক পুষ্টি জাতীয় খাবার না খেলেও চুলের গোড়া শক্ত হয় না যার কারণে চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

চুলে খুশকির সমস্যা

শীতকালে চুল পড়া সাথে খুশির সমস্যা ও অনেক দ্রুত বেড়ে যায়। এমন অনেক সময় আছে শীতকালে মাথায় কোনো যায় না আবার এমন অনেক সময় রয়েছে, ঠান্ডাতে বাতাসের কারণে টুপি ব্যবহার করা খুব জরুরী।

এমতাবস্থায় সারাদিন চুলের যে ময়লা জমে থাকে তা যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে চুলের মধ্যে খুশকি উৎপত্তি হতে পারে। অনন্য আবহাওয়ার তুলনায় শীতকালে বেশি আবহাওয়া সুস্থ থাকায় চুলে ময়লা ধরে বেশি এবং তা পরিষ্কার করো নাহলে খুশকির মনে হয় বেশি।

শীতকালে চুল পড়া রোধে করণীয়

চুল পড়া রোধ করতে হলে যেকোনো কেমিক্যাল জাতীয় উপাদান চুলে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। আপনার একেক সময় একেক রকমের কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য দিয়ে চুলে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এটা করা একেবারেই ঠিক নয়। আপনি এমন কেমিক্যাল ব্যবহার করতে পারেন যাতে আপনার চুলের ময়েশ্চারাইজার ঠিক থাকে।

তবে এমন কিছু ব্যবহার না করাও ভালো। আপনি যদি বাসায় গাছ থেকে সংগৃহীত মেহেদী পাতা বেটে চুলে ব্যবহার করতে পারেন সেটা আপনার জন্য অধিক শ্রেয়। শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসলের সময় মাথা না ধুয়ে স্বাভাবিক পানি দিয়ে মাথা ধোয়াই ভালো। গরম পানি দিয়ে মাথা ধোয়া হলে তা চুলের অনেক ক্ষতি করতে পারে।

তাই সবাই পানি দিয়েই মাথা ধোয়া তথা গোসল করে উত্তম। অনেক সময় ছেলেরা বা মেয়েরা চুলে হিট ব্যবহার করে চুল সোজা বা স্টাইল করার চেষ্টা করে। চুলে হিট ব্যবহার করা উচিত নয় এতে চুলের অনেক অনেক বেশি ক্ষতি হয়।তাছাড়া শীতকালে ঘন ঘন শ্যাম্পু করা ঠিক নয়। যখন চুল ময়লা হবে ঠিক তখনই শ্যাম্পু করাই উত্তম।

শীতকালে নানা ধরণের সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল পাওয়া যায়। সেগুলো পরিমিতভাবে খেলেও চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া রোধ হয়। তবে চুল পড়ার ওদের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে প্রাকৃতিক নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা। এতে চুলের জেল্লা অনেক বেড়ে যায়।

শীতকালে চুলের যত্নে করণীয়

শীতকালে চুলে যত্ন নিতে হলে নিয়মিত প্রয়োজন অনুযায়ী চুল পরিষ্কার করতে হবে এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। অনেক মানুষ আছেন যারা গোসলের সময় চুল ভেজান না।এটা আসলে করা ঠিক নয়। শীতকালে স্বাভাবিক পানি ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার করা উচিত।

তাছাড়া চুল এ নিয়মিত নারকেল তেল অলিভ অয়েল ব্যবহার করা উচিত।এতে চুলের গোড়া মজবুত থাকে এবং চুল ওঠার বা পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকটাই হ্রাস পেতে পায়

শীতকালে খুশকি দূর করার উপায়

শীতকালে রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই খুশকি প্রতিরোধে আপনারা অনেক কেমিক্যাল জাতীয় উপাদান ব্যবহার করে থাকেন।সেটা ব্যবহার করা উচিত নয়। আর যে আপনাদেরকে ঘরোয়া কিছু উপায় ব্যবহার করা উচিত। নিচে খুশকি প্রতিরোধে ঘরোয়া কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো-

টক দই ব্যবহারঃ খুশকি সমস্যা দূরীকরণের টকদের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুশির সমস্যা দূর করতে টক দই মাথার ত্বকে ভালোভাবে মেসেজ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই কাজটি সপ্তাহে দুইদিন করলে খুশকি সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যায়। খুশকি সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না।

লেবুর রস ব্যবহারঃ মাথার খুশকি সমস্যা দূর করতে লেবু অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুর রস হালকা একটু পানির সাথে মিশিয়ে মাথায় ২-৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাসাজ করলে খুশকি সমস্যা দূর হয়।

পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের রস চুলের এবং খুশকি প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকরী একটি উপাদান। দুটি পেয়াজ ছিলে ভালো করে বেটে একমুখ পানিতে ভালো করে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ পরে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে খুশকি সমস্যা দূর হয়।

নারিকেল তেলের ব্যবহারঃ নারকেল তেল চুল এবং মাথার ত্বকের জন্য আরেকটি কার্যকরী উপাদান। নারকেল তেল ব্যবহারে চুলের গোড়ার খুশকি এবং স্ক্যাল্প অনেক দ্রুত সেরে যায়। তাছাড়া যে কোন ইনফেকশনে এটি খুব দ্রুত প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে চুল পড়ার কারণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url