ছাগল পালন - ছাগল পালনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সারা বিশ্বে গবাদি পশুর মধ্যে ছাগল খুব নিরীহ জাতের প্রাণী। নিরীহ জাতের হওয়ায় এটিকে মানুষ খুব সহজে তাদের নিজেদের থাকার জায়গায় অর্থাৎ নিজেদের বসবাসের জায়গার পাশে কিছুটা থাকার জায়গা করে ছাগল পালন করতে পারে। এতে আপনারা খুব উপকৃত হতে পারেন।
পোস্টসূচীপত্রঃছাগল পালনের সময় অবশ্যই আপনাকে তাদের খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক যেমন নিজের কাছের যেকোনো জিনিসের খেয়ার রাখেন ঠিক সেভাবে এই গবাদি পশুরও খেয়াল রাখতে হবে।

ভুমিকা

সঠিকভাবে ছাগল পালন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অনেক লাভবান হয়েছেন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সঠিকভাবে ছাগল পালন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করবো। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

ছাগল সম্পর্কে

ছাগল খুব নিরীহ প্রজাতির একটি প্রাণী। এটি খুব সহজেই মানুষের বাসা-বাড়িতে অনেক যত্নে লালন-পালন করা যায়। এটি নিরীহ প্রজাতির প্রাণী হওয়ায় মানুষের সাথে এই সম্পর্ক খুবই দৃঢ়। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০ প্রজাতিরও বেশি ছাগল রয়েছে।

তবে বাংলাদেশে কয়েক প্রজাতির ছাগল খুব বেশি জনপ্রিয়। ছাগল প্রধানত দুধ, মাংস ও চামড়ার জন্য খুবই জনপ্রিয়। এগুলো এতোটাই জনপ্রিয় যে কখনো কখনো প্রয়োজন অনুযায়ী এটি অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করা হয়।

ছাগলের প্রকারভেদ

সারা বিশ্বে ৩০০ এর বেশি ছাগলের জাত থাকলেও বাংলাদেশে গুটি কয়েক ছাগলের জাত খুব বেশি জনপ্রিয়।কয়েক জাতের ছাগলের পরিচিত নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
  • রামছাগল বা যমুনাপারি ছাগল
  • বিটল ছাগল
  • বোয়ার ছাগল
  • বারবারি ছাগল

ছাগলের পরিচিতি

এর আগে আমরা আপনাদেরকে আমাদের দেশে প্রধানত কত রকমের ছাগল রয়েছে তার প্রকারভেদ আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি। এখন আমরা ছাগলগুলো সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো-

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলঃ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একটি ছাগলের জাত। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে বিশেষ করে বাসা-বাড়িতে পোষার জন্য কিনে থাকেন। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের আকার মাঝারি সাইজ এবং এর ওজন ২০ থেকে ৩০ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে।

তবে স্ত্রী জাতের থেকে পুরুষ জাতের ওজন তুলনামূলক বেশি। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের খাদ্যের চাহিদা অন্যান্য যেকোনো জাতের ছাগলের চেয়ে তুলনামূলক কম।ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জন্য জমি থেকে সংগ্রহ করা ঘাস,বিভিন্ন গাছের পাতা এবং বিভিন্ন শাক সবজির কেটে রাখা খোসা খাওয়ানো যায়। ওগুলো খেয়েই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল জীবনধারণ করতে সক্ষম।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল তোর গায়ের রং সাধারণত কালো হয়ে থাকে। তবে এর পাশাপাশি অনেক সময় সাদা এবং কালো রংয়ের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলও দেখা যায়। বাজারে মাংস কিনার ক্ষেত্রে প্রায় অনেক মানুষ গরুর চেয়ে এই জাতের ছাগলের মাংস বেশি পছন্দ করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর প্রতি সাত মাস অন্তর দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করার ক্ষমতা রাখে।

রামছাগল বা যমুনাপারি ছাগলঃ আমাদের দেশে ছাগলের জাতের কথা বলতে গেলে দুই নাম্বারে রাম ছাগল বা যমুনাপারি ছাগলের কথা বলতেই হবে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পরবর্তী স্থানে রয়েছে রামছাগল। এটিও বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি ছাগলের জাত। এই ছাগলটি অন্যান্য যেগুলো ছাগলের চেয়ে আকারে বড় হয়।রাম ছাগলের জাতটি মূলত বিদেশী একটি জাত।

এটি ভারতের যমুনা ও গঙ্গা মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেশি দেখতে পাওয়া যায় বলেই ছাগলের নাম যমুনাপারি বলা হয়। তবে এটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও বেশি দেখতে পাওয়া যায়। রাম ছাগলের মাংস ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মতো অতটা সুস্বাদু নয়। তবে রাম ছাগলের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য ছাগলের চেয়ে অনেক বেশি এবং এটি অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ।

এটি প্রতিদিন প্রায় ২ লিটার মত দুধ দিতে সক্ষম। রাম ছাগলের গায়ের রং সাদ, কালো বাদামি এবং হলদেটে কালার হয়ে থাকে। রামছাগল চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এই ছাগলের কান অনেক লম্বা হয়ে থাকে। রাম ছাগল প্রায় ৭০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্তজন হতে পারে। তবে পুরুষ ছাগলের চেয়ে স্ত্রীর ছাগলের ওজন প্রায় অর্ধেক।

রাম ছাগল প্রতিবছর একটি করে বাচ্চা প্রসব করে। এই ছাগলটি আকারে লম্বা হওয়ায় এটি বাজারে খুব ভালো বিক্রি করা যায়। ছাগল পালন বা খামার করার ক্ষেত্রে রামছাগল পালন ভালো একটা সিদ্ধান্ত।

বিটল ছাগলঃ অন্যান্য ছাগলের মত এই জাতের ছাগলটি বাংলাদেশ শত জনপ্রিয় না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে এই ছাগলের জন্য অনেক বেশি। বিটল ছাগল দুধ এবং মাংস দুইটা উৎপাদনে ব্ল্যাক বেঙ্গল ও রাম ছাগলের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। পিটল ছাগল রাম ছাগলের মত কেমন লম্বা হয় না।

এটি ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের মত মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। তবে এর ওজন গড়ে ৪০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিটল ছাগলের কান রামছাগলের মত লম্বা হয়ে থাকে। বিটল ছাগলের গায়ের রং দেখে এই জাতের ছাগলকে সহজে আলাদা করা যায়। এই ছাগলের গায়ের রং কালোর ওপরে যে কোন কালারের রং ফোঁটা ফোটা হয়ে মিশে থাকে।

দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিটল ছাগল রাম ছাগল এবং ব্ল্যাক বেঙ্গলের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। এটি দৈনিক তিন থেকে চার লিটার পর্যন্ত তো দিতে সক্ষম এবং বছরের একটি করে বাচ্চা প্রসব করে। তাই অনেকে দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিটল ছাগল নির্বাচন করে থাকে।

বোয়ার ছাগলঃ আমরা আপনাদেরকে এখন যে সকল সম্পর্কে বলবো সেটি মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য খুব জনপ্রিয়। বোয়ার জাতের ছাগলের পুরুষ জাতের ওজন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে পুরুষ জাতের থেকে স্ত্রী জাতের ওজন তুলনামূলক কম হয়। স্ত্রী জাতির ওজন ৯০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বউ আর যাতে ছাগল দুধ উৎপাদনের জন্য মোটেও সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি মূলত মাংস জন্য বেশি জনপ্রিয়। এই জাতের ছাগলটি বাংলাদেশে তেমন লালন পালন করা না হলেও বিদেশে চাহিদা অনেক বেশি। তবে বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক জায়গয় এখন মাংসের চাহিদা পুরনো জন্য অনেকেই বোয়ার জাতের ছাগলের খাবার করতে আগ্রহী উঠছে।

বারবারি ছাগলঃ বারবারই ছাগলটিও বিদেশি একটি জাত।বাংলাদেশে এর উপস্থিতি খুব কম লক্ষ্য করা যায়। এই জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গল এর মতোই ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। মাংস ও দুধের জন্যও এটি উপযুক্ত একটি ছাগলের জাত।

এটি মূলত আফ্রিকান একটি জাত। এই জাতের ছাগলের প্রধান খাদ্য ঘাস। বারবারই ছাগলের বৃদ্ধি অতি দ্রুত ঘটতে পারে। এরা বছরে দুইবার বাচ্চা প্রসব করতে পারে এবং প্রতিবারে ২ থেকে ৩ টি করে বাচ্চা প্রসব করার ক্ষমতা রাখে।

ছাগলের বাসস্থান

ছাগল খুব সংবেদনশীল প্রাণী। তাই অবশ্যই খুব যত্ন ছাগল পালন করা উচিত। ছাগল পালন করতে গেলে ছাগলের জন্য সঠিক নিয়মে ঘর তৈরি করা খুব জরুরী একটি বিষয়। আসুন এবার আপনাদেরকে সঠিক নিয়মে ছাগলের জন্য বাসস্থান তৈরীর কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো-

  • ছাগলের জন্য এমন জায়গায় ঘর করা উচিত নয় যেখানে ঘরটি স্যাতস্যাতে বা ভেজা হয়ে সাথে হয়ে থাকবে। সেজন্য অবশ্যই ছাগলের ভালোর জন্য মাচা দিয়ে উঁচু করে ঘর তৈরি করা উচিত।
  • যেহেতু ছাগল খুব সংবেদনশীল প্রাণী আর যেহেতু ছাগলের একটি আলাদা ঘর থাকবে তাই মনে রাখতে হবে ঘরে যেন অবশ্যই প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশ করতে পার।
  • ছাগলের ঘর সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে। না হলে তাদের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
  • ছাগলের ঘর তৈরি করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে ঘরটি যেন পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এবং ঘরটির দক্ষিণ দিক যেন খোলামেলা থাকে।
  • ছাগলের বাসস্থানের চারিদিকে নানা ধরনের বড় গাছ লাগানো ভালো। এতে ছাগলকে খাওয়ানো পাতার চাহিদাও অনেক হ্রাস পাবে।
  • বর্ষাকালে ছাগলের ঘরে যাতে পানি না ঢুকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বা ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বর্ষাকালে বা শীতকালে ছাগলের ঠান্ডা না লেগে যায়। সেজন্য দেয়াল চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া খুবই উপযোগী।

ছাগল পালনের উপকারিতা

যেহেতু আপনারা আগে জেনে গেছেন ছাগল খুব সংবেদনশীল প্রাণী। তাছাড়া ছাগল খুবই মিশুক প্রাণী। সেই কারণেই খুব সহজভাবে ছাগল লালন পালন করা যায়। ছাগল পালন করে আমাদের দেশের অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রায় সব জাতের ছাগলই বছরে একবার করে বাচ্চা প্রসব করে থাকে।

তাই প্রতিবছরই ছাগল বিক্রি করে অনেক খামারিদের ভালো একটা লাভজনক ব্যবসা হয়ে থাকে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে ছাগল পালন অতটা কষ্টকর নয়। খামারিরা তাদের ছাগলকে প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস খাইয়ে অতি সহজে ছাগল পালন করতে পারে। তাছাড়া গাছের পাতাও গ্রামাঞ্চলে খুবই সহজলভ্য। তাই ছাগল পালনে খামারেদের খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। তাই ছাগল পালন খুব লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়।

ছাগল পালনের অপকারিতা

ছাগল পালনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। ছাগল পালনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ছাগলকে কখনো ঠান্ডা লাগানো যাবে না। একে অবশ্যই ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলটির ছাগল পালন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url