আমলকির পুষ্টিগুণ - আমলকি তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আমাদের দেশে অনেক রকমের নানা গুণে ভরপুর সম্পূর্ণ ফল ফলাদি রয়েছে। এর মধ্যে আমলকি অনেক গুণে ভরপুর একটি ফল। আমলকির পুষ্টিগুণ অনেক। যা বলে শেষ করা যাবে না। আমলকি মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান এর অভাব পূরণে অভাবনীয় কাজ করে।
পোস্টসূচীপত্রঃআমলকির কথা তুলনা করলে একে সুপার ফুডের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে। কারণ এতে যে খাদ্য উপাদানগুলো বিদ্যমান সেগুলো বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় পর্যন্ত সবার জন্যই খুব বেশি উপকারী। তাছাড়া অনেক সময় নিয়মিত আমলকি খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সৃষ্টি হয়।

ভুমিকা

আজকে আপনারা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমলকির গুনাগুন, আমলকির ব্যবহার, আমলকির পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুন, আমলকি খেলে কি হয় এবং আমলকিতে কি তৈরি করা যায় এই সমস্ত কিছু জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ করছি।

আমলকির পুষ্টিগুণ

আমলকি একধরনের ভেষজ জাতীয় উদ্ভিদ। আমলকির গুণাগুণ এর ফল এবং পাতা দুটোতেই রয়েছে। তবে পুষ্টিগণের দিক দিয়ে দেখতে গেলে যেকোনো ফলের চেয়ে আমলকির গুনাগুন সবচেয়ে বেশি। কাঁচা আমলকি খেলে বা রস করে খেলে মানবদেহের রক্ত পরিষ্কার হয় এবং যৌবন ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত নিয়ম করে আমলকি খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। শীতকালে অনেক সহজলভ্য ফল হিসেবেও আমলকি পরিচিত।

আমলকির ঔষধিগুণ

আমলকি যেহেতু একটি ভেষজ জাতীয় উদ্ভিদ তাই এর ঔষধি গুণাগুণ অনেক। এমন অনেক রোগ আছে যেগুলো আমলকি খেলে খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়।কি খেলে যে ঔষধিগুণগুলো পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ-
  • মানবদেহে স্নায়ুর সমস্যা হলে নিয়মিত আমলকি খেলে এটি খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যায়।
  • বমি বমি ভাব মনে হলে আমলকি খেলে তা খুব দ্রুত দূর হয়ে যায়।
  • অনেকদিন ধরে ঠান্ডা লাগার সমস্যা বা সর্দিকাশি এমন থাকলে নিয়মিত আমলকি খেলে তা সেরে যায়।
  • নিয়মিত আমলকি খেলে হার্ট এর সমস্যা দূর করে।
  • আমলকি মানুষের মস্তিষ্ককে দ্রুততর করতে সাহায্য করে।
  • দাঁত,চুল ও ত্বক ভালো রাখতে আমলকির গুরুত্ব অনেক।
  • আমলকি মানুষের খাওয়ার রুচিও বৃদ্ধি করে।

আমলকি খাওয়ার নিয়ম

আমলকির গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানলাম। এবার এটি খাবার নিয়ম সম্পর্কেও জেনে নেয়া যাক। আমলকি আপনারা চাইলে যেকোনো ভাবেই খেতে পারেন। জুস করে হোক, কাঁচা চাবিয়ে হোক বা এটি রোদে শুকিয়ে পাউডার তৈরি করেও এটি সেবন করা যায়। আমলকি যেকোনো সময় খাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু সময় নিয়ম মেনে খেলে যেকোন কিছুর উপকারিতা পাওয়া যায়।

আমলকি খেলে কি হয়

আমলকির পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা অজস্র। আমলকি যদি নিয়ম মেনে খাওয়া যায় তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, চুলের রুক্ষতা কমিয়ে চুলের জেল্লা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যাও দূর করতে অনেক সাহায্য করে। আমলকি খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে অন্য যেকোনো ফলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া আমলকি খেলে চুলের খুশকি দূর হয়ে চুলের গোটা মজবুত করতে অনেক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যায়। শরীরের যেকোনো ভিটামিন সি এর অভাব পূরণে আমলকির জুড়ি মেলা ভার। তাই নিয়মিত নিয়ম করে আমলকি খেলে শরীরের কর্মক্ষমতাও বাড়ে এবং ভিটামিন সি এর কারণে চোখের যে কোনো সমস্যা থেকেও বিরত থাকা যায়।

আমলকির সিরাপের কাজ

আমলকি যেমন কাঁচা বা রস করে খাওয়া যায়। তেমনি এমন অনেক ঔষধ কোম্পানি আছে যারা আমলকির ঔষধ বা সিরাপ তৈরি করেও বিক্রি করে। আমলকির সিরাপ মানুষের শরীরের জন্য উপকার এবং অপকার দুটোই বয়ে নিয়ে আসে। এখন আমরা আমলকি সিরাপের উপকার আর অপকার সম্পর্কে জেনে নিবো-

সিরাপের উপকারিতা

  • অনেকে খাবারের রুচি বর্ধনের জন্য স্মলকির সিরাপ সেবন করে থাকে।
  • আমলকির সিরাপ খেলে স্বাস্থ্যও অনেক ভালো হয়।
  • অনেক মানুষ আছে যারা শরীরের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমলকি সিরাপ গ্রহণ করে থাকে।
  • তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও অনেকে আমলকি সিরাপ খেয়ে থাকে।

সিরাপের অপকারিতা

  • যেহুতু মানুষ রুচি বর্ধনের জন্য এই সিরাপটা গ্রহণ করে থাকে তাই এই সিরাপ খাওয়া ছেড়ে দিলে মানুষের শারীরিক অনেক পরিবর্তন ঘটে এবং সমস্যা হতে পারে।
  • আমলকি সিরাপ বেশি খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কর্মক্ষমতা বাড়াতে যেয়ে যদি প্রয়োজনের অধিক এই সিরাপ সেবন করা হয় তবে তা স্বাস্থ্য নষ্ট করতেও ভুমিকা রাখতে পারে।
  • তাছাড়া পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়।

আমলকি দিয়ে জুস তৈরি

আমলকি দিয়ে জুস তৈরি করতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমে জানতে হবে কিভাবে জুস তৈরি করে হয়। প্রথমে আপনি আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর আমলকির জুস বানানোর জন্য ৪ টা আমলকি,সামান্য গোল মরিচের গুড়া,এক চা চামচ মধু,বরফ কুচি এবং পানিও প্রয়োজন।

এবার জুস তৈরি করতে গেলে আমলকিগুলোকে প্রথমে ভালো করে ধুয়ে থেতলে এর সাথে গোল মরিচ গুড়া ভালো কিরে মিশিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। কিছুক্ষণ ব্লেন্ড করা পর সেটিতে মধু মিশিয়ে কিচ্ছুক্ষণ ফ্রিজে রাখুন। এর কিছুক্ষণ এটি বের করে খাওয়া যায়।

আমলকি দিয়ে তেল বানানো

চুল পড়ার সমস্যা প্রায় সবারই রয়েছে। শীতকালে এর পরিমাণ আরো অনেক বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমলকির তেল ব্যবহার করা খুব জরুরি। এখন আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে আমলকি দিয়ে তেল তৈরী করা হয়-

উপায় ১ঃ আমলকির তেল তৈরির এটি খুবই সহজ উপায়।প্রথমে কয়েকটি আমলকি নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে এটি থেকে রস বের করে নিতে হবে। এরপর পরিমাণ অনুযায়ী এক কাপ আমলকির রস এবং এক কাপ নারকেল তেল এই দুটি উপকরণ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি গ্যাসে বা চুলায় হালকা আঁচে গরম করতে দিন। গরম করতে দেওয়ার পর আস্তে আস্তে মিশ্রণটির রং বদলাতে শুরু করবে। এর কিছুক্ষণ পর মিশ্রণটি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা করতে দিন। এভাবেই তৈরি হয়ে গেলো আমলকির তেল।

উপায় ২ঃ এই উপায়ে আমলকির তেল তৈরী করতে হলে কয়েকটি উপাদান খুব প্রয়োজন। এই উপায়ে আমলকি লাগবে ১৫-২০ টি, ১/৪ কাপ মতো কারিপাতা,নারকেল তেল, ৫-৬ টি মতো ভিটামিন ই ক্যাপসুল। আমলকি গুলোকে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর শুকিয়ে নিতে হবে আর নাহলে শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে উছে নিতে হবে।

এরপর একটি ছুরি দিয়ে আমলকির শাঁসগুলোকে ছাড়িয়ে কেটে নিয়ে বিচিগুলো বের করে নিতে হবে। এরপর শাঁস ছাড়ানো আমলকি, কারিপাতা এবং নারকেল তেল একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর চুলায় হালকা আঁচে দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে। যখন দেখবেন মিশ্রনটির রং বদলাতে শুরু করেছে তখন এটি আঁচ ঘুমিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা করতে দিন। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল আমলকির তেল।

চুলের যত্নে আমলকি তেলের গুরুত্ব অনেক। নিয়মিত আমলকি তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল ওঠা অনেক কম তো শুরু করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাছাড়া চুলের বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব দূর করতেও আমলকি তেলের গুরুত্ব অনেক।

আমলকির আচার

আমলকির আচার তৈরি করতে বেশ কিছু উপকরণ প্রয়োজন সেগুলো নিম্নরূপ-
  • আধা কেজি আমলকি
  • দেড় কাপ মতো সরিষার তেল
  • স্বাদমতো লবণ
  • ২ টেবিল চামচ চিনি
  • ১ চা চামচ পাঁচফোড়ন
  • ১চা চামচ জিরা গুঁড়া
  • ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া
  • ১ চা চামচ শুকনা মরিচ বাটা
  • আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া
  • ১ চা চামচ পাঁচফোড়ন গুঁড়া
  • ১ চা চামচ সরিষা বাটা
প্রথমে আমলকি গুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর আমলকি গুলো চার টুকরো করে কেটে নিতে হবে।কেটে নেওয়া আমলকি গুলোতে লবণ হলুদ মাখিয়ে তা হবে। রোদে শুকানো হয়ে গেলে একটি কড়াই তেল নিন। এরপর গরম তেলে পাঁচফোড়ন ছেড়ে দিন।

এবার রোদে শুকনো আমলকি গুলো করে ছেড়ে দিন। এরপর লবণ চিনি এবং অন্যান্য মসলা গুলো আমলকির মিশ্রনের সাথে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ নাড়ার পর নরম হয়ে এলে মিশ্রণটি নামিয়ে নিন। এরপর এটি ২-৩ দিন রোদে দিয়ে একটি কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করে রাখুন।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমলকির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করতে পেরেছি।

এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url